আটক আসামির পলায়ন : চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ৬ পুলিশ ক্লোজড

জীবননগরের সিংনগরে মাদক বিরোধী অভিযান : কিছু নারীসহ জনতার সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তি

স্টাফ রিপোর্টার: নিজেদের আয়ত্ত পার হয়ে সাদা পোশাকে আসামি ধরতে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশের ৬জনকে ক্লোজড করা হয়েছে। ক্লোজড হওয়া পুলিশের ৬ জনের মধ্যে ৫জন কর্মকর্তা ও একজন কনস্টেবল। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্তপূর্বক তাদেরকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হতে পারে। সদর থানা পুলিশের ৫ কর্মকর্তাসহ ৬জন জীবননগর উপজেলার সিংনগর গ্রামে আসামি ধরতে গেলে এলাকাবাসীর সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরেই অভিযুক্ত ৬ পুলিশকে গতরাতে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে নেয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের ক্লোজড হওয়া পাঁচ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং একজন কনস্টবেলা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক রমেন কুমার সরকার, সহকারী উপ-পরিদর্শক ইন্দ্রোজিত কুমার, সহকারী উপ-পরিদর্শক কামরুল ইসলাম, সহকারী উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান, সহকারী উপ-পরিদর্শক ইউসুপ আলী এবং কনেস্টবল জসিম উদ্দীন। গতরাত ১০টার দিকে এদের চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
এলাকাসূত্রে জানা জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গিয়ারপোতা ও আকন্দবাড়িয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান জীবননগর উপজেলার সিংনগর গ্রামের। সদর থানার ৬ পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই শাদা পোশাকে আসামি ধরতে সিংনগরে ঢুকে পড়েন বৃহস্পতিবার বিকেলে। এ সময় শাদা পোশাকধারী পুলিশ তিন বোতল ফেনসিডিলসহ পলাশকে ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে। শাদা পোশাকে পুলিশকে দেখে গ্রামের কতিপয় লোক পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়। একদল নারী পলাশকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা করে। পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ৬ পুলিশকে উদ্ধার করা হয়। তবে সিংনগর গ্রামের কতিপয় লোক দাবি করেছে, শাদা পোশাকধারী পুলিশ গ্রামের সাধারণ মানুষকে মারধর করে এবং বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ও বাড়ি ঘরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। তবে পুলিশ বলেছে, নিজেদের ঘরে নিজেরাই ভাঙচুর ও কোপাকুপি করে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
পুলিশের একটিসূত্র জানায়, গ্রামের মেহের আলীর ছেলে ‘প’ দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করে আসছে। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রমেন কুমার সরকারসহ ৪ সহকারী উপপরিদর্শক ইন্দ্রোজিত কুমার, কামরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, ইউসুপ আলী এবং কনেস্টবল জসিম উদ্দীন শাদা পোষাকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদক ব্যবসায়ী পলাশকে গ্রেফতারের জন্য সিংনগর গ্রামে যান। এক পর্যায়ে তারা মাদকসহ পলাশকে গ্রেফতার করেন। এসময় একই পাড়ার মাদক ব্যবসায়ী পলাশের সহযোগী নারীরা পলাশকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই পাড়ার পুরুষ মাদকব্যবসায়ীরাও নারীদের সাথে যোগ দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে পলাশকে ছাড়িয়ে নেন এবং পুলিশ সদস্যদেরকে একপ্রকার বন্দি করে রাখেন। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এবং জীবননগর থানা থেকে পুলিশ এসে ওই ৬ পুলিশকে উদ্ধার করে। গতরাতে উদ্ধারকৃত ৬ পুলিশকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম মাথাভাঙ্গাকে জানান, যেহেতু সদর থানা এলাকাধীন কয়েকটি গ্রামের পাশেই জীবননগর উপজেলার সিংনগর গ্রাম। পুলিশ সদস্যরা চুয়াডাঙ্গায় নতুন। তাই তারা ভালোভাবে গ্রাম চিনতে না পেরে আসামি ধরতে অন্যগ্রামে ঢুকে পড়েন। এছাড়া তাদের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না। এতে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদাহানি হয়েছে। এতে আমরা বিব্রত। এ কারণেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে বরখাস্তও করা হতে পারে।