আজ থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ

আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলেই সেই পরীক্ষা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে আজ ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে, এ ব্যবস্থা চলবে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ তথ্য জানান।
আগামী ১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় বিষয়ে পরীক্ষা হবে। গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষার আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিললেও পরীক্ষা বাতিল করেনি সরকার।
সচিব সোহরাব বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যদি এ রকম ঘটনা (প্রশ্ন ফাঁস হয়) ঘটে, পরীক্ষার পরও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পরীক্ষার আগে প্রশ্ন আউট হয়েছে, সে ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষা বাতিল করা হবে। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।
তিনি বলেন, পরীক্ষা হওয়ার পরও যদি প্রমাণ হয় যে, এই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তাহলে সেই পরীক্ষাটি অবশ্যই বাতিল করবো। কোনো অবস্থাতেই কোনো ধরনের আপস আমরা করতে রাজি নই।’
প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার মতো যত পথ রয়েছে, তা বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দাবি করে সোহরাব বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই আমরা আমাদের এই প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য কাউকে সে পথে এগুতে দেবো না। যদি কেউ এগোন এবং ধরা পড়েন, নিশ্চিত প্রমাণ পেলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এবার থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সব শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা হবে একই প্রশ্নে।
অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে কোনো ঝুঁকি থাকছে কিনা- এ প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কারণে এই ঝুঁকিটা নিচ্ছি। অনেক সময় অনেকে আমাদের অভিযুক্ত করছেন যে, বিভিন্ন বোর্ডে বিভিন্ন মানের প্রশ্ন হচ্ছে, সারাদেশে একভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না।’ ওই সমস্যা মেটাতেই সারাদেশে এক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগের কথা বলেন সচিব। ‘ঝুঁকি আমরা এবার নিচ্ছি, পুরোপুরি নিচ্ছি, আমরা পরীক্ষা বাতিল করবো। কোনো অবস্থাতেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে (যদি ফাঁস হয়) পরীক্ষা নেবো না।’
শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক করে সোহরাব বলেন, ‘কোনো অবস্থায় যদি কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে আনন্দিত হন, তাহলে তার জন্য সংবাদ হচ্ছে, সেই পরীক্ষাটি বাতিল হবে।’ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো প্রশ্ন ফাঁস করার একটি ‘আখড়া’। ‘তারা যদি প্রশ্ন ফাঁস করতে পারে, তাহলে সেখানে ছাত্র বেশি যায়। আমরা আজ শুক্রবার থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখবো। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ থাকবে।’ আজ শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শুধু কেন্দ্রে প্রবেশ নয়, অবশ্যই সিটে বসতে হবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই প্রশ্নের প্যাকেট খোলা হবে। এর আগে কেউ প্রশ্নের প্যাকেট খুললে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।’ ঠিক সময় কেন্দ্রে পৌঁছুতে যানজট কিংবা পরীক্ষা কেন্দ্র দূরে হলে, সেটা আগে থেকেই বিবেচনায় নিয়ে বাসা থেকে রওনা হওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্ট ফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন। অন্য কেউ কোনো ধরনের মোবাইল সঙ্গে রাখতে পারবেন না। ‘আমরাও পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে মোবাইল বাইরে রেখে যাব।’
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাথাভাঙ্গাকে জানান, কোচিং বন্ধে মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টার বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।