আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস

স্টাফ রিপোর্টার:আজ জাতীয় গণহত্যা দিবস, মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন। একাত্তরের অগ্নিঝরা ২৫ মার্চে বাঙালির জীবনে নেমে আসে নৃশংস, বীভত্স, ভয়ঙ্কর ও বিভীষিকাময় কালরাত্রি। এ রাতে বর্বর পাকবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’র নামে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। আর এদিন বাঙালি জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিলো ইতিহাসের এক নৃশংস বর্বরতা। গত বছরের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকেই দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার স্মরণে এবং ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির দাবিতে আজ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিট বিদ্যুত্সহ সব ধরনের বাতি বন্ধ রেখে ‘ব্ল্যাক-আউট’ কর্মসূচি পালন করা হবে। এই এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ (কেপিআই ও জরুরি স্থাপনা ছাড়া)। দাঁড়িয়ে লাইট বন্ধ করে সারাদেশের মানুষ একসাথে নীরবতা পালন করবে।

একাত্তর সালের ২৫ মার্চ কৃষ্ণপক্ষের রাত। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো নরঘাতক কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়লো শহরময়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এ নাম নিয়েই মৃত্যুক্ষুধা নিয়ে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক নেমে এলো। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিন গান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হলো রাতের বাতাস। মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পাক জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব। হকচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে।

২৫ মার্চ রাত সোয়া ১টার দিকে একদল সৈন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। তখন বঙ্গবন্ধু বীরের মতো দোতলার ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়ান। রাত ১টা ২৫ মিনিটের দিকে এ বাড়ির টেলিফোনের লাইন কেটে দেয়া হয়। এ সময় বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে নস্যাতের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় হায়নার দল। অবশ্য গ্রেফতার হওয়ার আগেই ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তত্কালীন ইপিয়ারের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। আর এই ওয়্যারলেস বার্তা চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছে। তখন চট্টগ্রামে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের তত্কালীন শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণার ভিত্তিতেই ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।