আওয়ামী লীগের ৬৫তমপ্রতিষ্ঠাবার্ষিকীআজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: আওয়ামী লীগের ৬৫তমপ্রতিষ্ঠাবার্ষিকীআজ। দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের উজ্জ্বল ভূমিকা। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র যুগান্তকারী নির্বাচন আর ১৯৭১ সালেরমহান স্বাধীনতা আন্দোলন সবখানেই সরব উপস্থিতি ছিলো আওয়ামী লীগের। এ স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসেনানী ছিলেনবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিভাজ্য সত্তা।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগেরযাত্রা শুরু। এ বছরের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজগার্ডেনে তত্কালীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধান বিরোধী দল হিসেবে পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। প্রথম কাউন্সিলে মওলানাআব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হককে দলের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণসম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। তখন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কারাগারেবন্দী। বন্দী অবস্থায় তাকে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম কমিটির যুগ্মসম্পাদকনির্বাচিত করা হয়। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।এতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণসম্পাদক হন।১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার রূপমহল সিনেমাহলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণতহয়। ৫৭সালে কাগমারী সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক নীতির প্রশ্নেসোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগভেঙে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আরমূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ওসাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিকশাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়। ১৯৬৪ সালে দলটিরকর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তর্কবাগীশও শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন।১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলেরসভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান, তার সাথে সাধারণ সম্পাদকনির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এরপর ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ওসাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথমকাউন্সিলে সভাপতি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণসম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালেবঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ ছেড়ে দিলে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়এএইচএমকামরুজ্জামানকে। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৫সালের ১৫ আগস্ট আসে আওয়ামী লীগের ওপর মরণাঘাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকেসপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবারওস্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকেওপুনরুজ্জীবিত করা হয়।এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় যথাক্রমেমহিউদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে। ১৯৭৭সালে এ কমিটি ভেঙে করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। এতে দলের আহ্বায়ক করা হয় সৈয়দাজোহরা তাজউদ্দীনকে। ১৯৭৮ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি করা হয় আবদুল মালেকউকিলকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুর রাজ্জাক। বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনাহয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগেরসভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন আব্দুররাজ্জাক। ১৯৮৩ সালে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বেদলের একটি অংশ পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করে। এ সময়সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৭সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদকহন।১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং মো. জিল্লুর রহমানযথাক্রমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের বিশেষকাউন্সিলে একই কমিটি বহাল থাকে। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলেশেখ হাসিনা সভাপতি এবং আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৮সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের একক বৃহত্তমরাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হওয়ার পর ২০০৯সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ হাসিনা সভাপতিপদে বহাল থাকেন এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বর্তমান স্থানীয়সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১২সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতসর্বশেষ কাউন্সিলে শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাক্রমে সভাপতি ওসাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন।