আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাই শেষ পর্যায়ে

 

স্টাফ রিপোর্টার: সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তা সত্ত্বেও সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম প্রায় শেষ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি মাসেই সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। ঢাকার ২০টি আসন বাদে দেশের সব আসনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সুপারিশের মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তৃণমূল নেতাদের নম্বরের ভিত্তিতে প্রতি আসনে দুজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এ মাসে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার আগেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে তালিকা প্রকাশ করা হবে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর।

বর্তমানে চলছে বিভিন্ন সংস্থা ও পেশাজীবীদের করা জরিপ রিপোর্টের মূল্যায়ন। এসব জরিপ প্রতিবেদনে মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জনবিচ্ছিন্নতার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। তাই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও শতাধিক এমপি। সর্বশেষ গণভবনে নেয়া দলের তৃণমূল নেতাদের পরীক্ষার নম্বরপত্র মূল্যায়ন শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছেন।

জানা গেছে, তৃণমূল নেতাদের নম্বরের মূল্যায়নে অধিকাংশ সংসদ সদস্যের পক্ষে মতামত গেলেও জরিপ প্রতিবেদনের চিত্র ভিন্ন। তাই ওই তালিকার সাথে জরিপ প্রতিবেদনের সুপারিশ মিলিয়ে নেয়া হচ্ছে। তৃণমূল নেতা ও জরিপের সুপারিশ সমন্বয় করে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করবেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে, ঢাকার ২০টি আসন বাদে সারাদেশের আসনের বিষয়ে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতা ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের আসনগুলোতে একজন প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের আসনের সংখ্যা প্রায় ২০টি। প্রার্থী বাছাই কাজে সংশ্লিষ্ট একজন জানিয়েছেন, তৃণমূল নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি এ তালিকা থেকেই যে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে তা নয়। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর বাইরেও যে কাউকে মনোনয়ন দিতে পারেন। অনেক আসনের ক্ষেত্রেই তেমনটি হতে পারে। এ কারণেই আরপিও সংশোধন করে দলবদল করে নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাবেক আমলা ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রতিটি আসনে মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এবং দলের জনপ্রিয় নেতাদের ব্যাপারে সার্বিক খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর অবস্থান বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এ জরিপে। বিএনপি বা অন্য দলের প্রার্থী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নির্বাচন করলে তার ফলাফল কি হতে পারে- সে সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা রয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। তাদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সব তথ্যই রয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে।

সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় ফরম বিতরণ শুরু হচ্ছে। এ কাজ শেষে এ মাসেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসের ১৬ অথবা ১৭ তারিখে শ্রীলংকা যেতে পারেন। সে দেশ থেকে ফিরেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডাকবেন তিনি। আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবে। একদিকে এ কার্যক্রম চলতে থাকবে অন্যদিকে প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করা হবে।

এ ব্যাপারে গণভবন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। যখন যে জেলার সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে, তার আগের দিন চূড়ান্ত হবে ওই জেলার মনোনয়ন। একদিনে একাধিক জেলার প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীকে ইঙ্গিত প্রদান করা হবে যে, তিনিই মনোনয়ন পাচ্ছেন। অন্যদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার নির্দেশ দেয়া হবে। ঢাকার প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে এখনও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীসহ ঢাকা জেলার ২০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে ব্যাপক রদবদল আনা হবে। সেক্ষেত্রে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ঢাকার মতিঝিল থেকে সরিয়ে বরিশালের বাবুগঞ্জে তার সাবেক আসনে পাঠানোর বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।