আওয়ামী লীগের দুপক্ষের তুমুল সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৮ ব্যক্তি আহত

 

 

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ৮ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে নতিপোতা গ্রামের গ্রোথ সেন্টারের সামনে এঘটনা ঘটে। গুরতর আহত তিনজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ও দামুড়হুদা উপজেলা স্বস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের যুগ্মসম্পাদক নতিপোতা গ্রামের মৃত. হুরমত আলীর ছেলে আজিজুল হক আজিজ বিদ্যালয় যায়। এসময় প্রতিপক্ষ নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভগিরথপুর গ্রামের মৃত. বরকত আলীর ছেলে জাফর আলী গ্রুপের লোকজন তাকে বাধা দিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে উভয় গ্রুপের মধ্যে সশস্ত্র (দেশীয় অস্ত্র) সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের সামনে সশস্ত্র সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তা প্রতিহত না করে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১০ জন রক্তাক্ত জখম হয়ে আহত হয়েছে। আহতরা হলেন জাফর গ্রুপের- ভগিরথপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে নাসির (৪০), আজিজুলের ছেলে ইলিয়াস (৪৫), তছের উদ্দীনের ছেলে নিজাম উদ্দীন (৩০), কাজেম আলীর ছেলে বাদল (৩০) এবং ও আজিজ গ্রুপের নতিপোতা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে হাসেম (২৮), রহিমের ছেলে তাহের (৩২), মোয়াজ্জেমের ছেলে সুমন (২৪), গোলাম হোসেনের ছেলে আলী (৩২)। আহতদের মধ্যে বাদল, নিজাম ও নাসিম আলীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্যরা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছে।

দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসার বিকাশ কুমার সাহা জানান, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় বিদ্যালয় থেকে ২শ গজ দূরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমানসহ আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যায়। ওই সময় সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপর নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ জানান, ‘নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে ফরম উত্তোলনের জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষ জাফর আলীর লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তাদের পক্ষের তিনজন আহত হয়। গোলযোগের আশঙ্কায় সম্প্রতি প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো সহযোগিতা করেনি।’

অপরদিকে, নতিপোতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর আলী জানান,‘ভগিরতপুর গ্রামের লোকজন নতিপোতা গ্রামের দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশের একটি পাটক্ষেত থেকে তার লোকজনের ওপর পরিকল্পিত হামলা করে প্রতিপক্ষ আব্দুল আজিজের লোকজন। এসময় তার পক্ষের চারজন আহত হয়। এদের মধ্যে তিনজনকে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজিজুল হক জানান, গতকাল শনিবার ছিলো বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র উত্তোলনের দিন। আর আজ রোববার ছিলো জমা দানের শেষ দিন। দুগ্রুপের সংঘর্ষের আশঙ্কার পূর্ভাবাস পেয়ে বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করি। এ সংঘর্ষের আশঙ্কা আগে থেকে জানতে পেরে তা রোধ করতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ পুলিশের একটি দল। নির্বাহী অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতিতে আজিজ গং সশস্ত্র নগ্ন হামলা চালালেও পুলিশ তাদের প্রতিহত না করে নীরবে দাঁড়ায় দর্শকের ভূমিকায় তা ভগিরাতপুর এলাকাবাসীর অভিযোগ। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিকদার মশিউর রহমান জানান ওই এলাকাবাসীর এ অভিযোগ সঠিক নয়।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান জানান, পুলিশ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওখানে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এসময় আমি অবস্থান করছিলাম বিদ্যালয়ের ভেতরে আর ঘটনাটি ঘটেছে যেহেতু বাইরে। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের কারণে বিদ্যালয়ের এ ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুল হককে গতকালই তলব করে এ স্থগিতের নোটিশ বিদ্যালয়ে টাঙানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

দামুড়হুদা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিকদার মশিউর রহমান তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে, কেউ আটক হয়নি।

উল্লেখ্য, নতিপোতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির নির্বাচন উপলক্ষে গত ২৫ জুন স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানের তারিখ ২৬-২৯ জুন, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ জুন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ১ জুলাই ও নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো ১১ জুলাই।