আইসিটি বিল পাস : পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের ক্ষমতা পেলো পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার: তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধনী) বিল এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিতের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান রেখে দুটি পৃথক বিল গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধনী) বিলে পুলিশকে কোনোরকম গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অপরাধ সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনজনিত অপরাধে দণ্ড বৃদ্ধি ও অপরাধসমূহ অজামিনযোগ্য বিধান করে বিলটি পাসের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ সংসদে উত্থাপন করলে তা গতকাল কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলে বিদ্যমান আইনের ৫৪, ৫৬, ৫৭ ও ৬১ ধারা সংশোধন করে সাজার মেয়াদ অনধিক ১৪ বছর ও অনূন্য ৭ বছর করা এবং অপরাধসমূহ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করা হয়। বিলে এ বিধান সংবলিত ইতোমধ্যে জারি করা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ রহিত করা হয়।

সংসদ অধিবেশন না থাকায় গত ২০ আগস্ট বহুল আলোচিত ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন সংশোধনে অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। ১৯ আগস্ট এ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদে অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই তা অনুমোদনের কথা বলা হয়। বিলে শাস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে কমপক্ষে সাত বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। ২০০৬ সালের পাস হওয়া এ আইনে সর্বোচ্চ সাজার বিধান ছিলো ১০ বছর। বিলে পুলিশকে কোনোরকম গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তথ্য ও প্রযুক্তি অপরাধ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনে কিছু অপরাধ জামিন-অযোগ্য করা হয়েছে। আগের আইনে সব অপরাধ জামিনযোগ্য ছিলো। আগের আইনে মামলা করতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হতো; কিন্তু নতুন আইনে পুলিশ অপরাধ আমলে নিয়ে মামলা করতে পারবে।

যুদ্ধাপরাধের দণ্ডিতরা ভোটার হতে পারবেন না
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিতদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান রেখে গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে ভোটার তালিকা (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন-২০১৩ পাস হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। বিরোধীদলীয় সদস্যরা বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব জমা দিলেও অনুপস্থিতির কারণে তা উত্থাপিত হয়নি। পাস হওয়া বিলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) সাজাপ্রাপ্তদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ বিধান কার্যকর হলে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশ কলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার ১৯৭২ (পি ও নম্বর ৮ অব ১৯৭২) অথবা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ (অ্যাক্ট নম্বর ১৯ অব ১৯৭৩)-এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত হলে তিনি ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবেন না। আর আগে ভোটার তালিকাভুক্ত হলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিল পাস: এদিকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নন, এরূপ নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিধান এবং পরিচয়পত্রের তথ্যকে গোপনীয় ও তা বেআইনিভাবে প্রকাশকে অপরাধ গণ্য করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন-২০১৩ নামে আরেকটি বিল গতকাল সংসদে পাস হয়। আইনমন্ত্রী বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।