অস্ত্র হাতে হামলাকারী সেই দুজন বহিষ্কার

রাবির ঘটনায় ৪ মামলা আসামি তিন শতাধিক : বাড়িমুখো শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছিলো তারা। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। কিন্তু ঘটনার একদিন পেরুলেও তাদের কারও টিকি স্পর্শ করতে পারেনি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে হয়নি কোনো মামলাও। উল্টো চার মামলার আসামি হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে অস্ত্র হাতে হামলাকারী ওই দুজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অপরদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশের ফলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি ফিরতে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়।

image_737_106321

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্র হাতে হামলাকারী নাসিম আহমেদ ওরফে সেতু ও শামসুজ্জামান ওরফে ইমনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বহিষ্কৃত নাসিম আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শামসুজ্জামান সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সিদ্দিকী নাজমুল আলম জানান, অস্ত্র নিয়ে হামলাকারী সেতু ও ইমনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরো কারা জড়িত, সেটা তদন্ত প্রতিবেদনে বের করা হবে।

এদিকে হামলা ও সংঘর্ষের জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় গতকাল সকালেই সবকটি হলত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান করে। পরে রাবি ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা হল থেকে বেরিয়ে আসে। এদিকে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর নামে মতিহার থানায় দুটি মামলা করেছেন। এছাড়া সন্ধ্যায় পুলিশ বাদী হয়ে আরও দুটি মামলা করে। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের বা কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে রোববারের ঘটনা তদন্তে ছাত্রলীগও একটি কমিটি গঠন করেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মামলার বিষয়ে মতিহার থানার এসআই চিত্তরঞ্জন বলেন, মামলা দুটির একটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে বাধাদান, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরটি বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলায় ৬০ জনকে নামসহ অজ্ঞাত দেড়শ এবং দ্বিতীয় মামলায় ৫০ জনের নামসহ অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, থানার এসআই মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দুটি পৃথক মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। মামলা দুটি একটি সরকারি কাজে বাধা এবং অপরটি বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি বাদী হয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি আশরাফুল আলম ইমনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে রাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে বলেও পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়ায় বাড়ি ফিরতে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত যানবাহনের জন্য দীর্ঘ সময় নগরীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে এবং রেলওয়ে স্টেশনে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত সাংবাদিকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানান। তারা তিনজন সহকারী প্রক্টর ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ উপকমিশনার (পূর্ব) প্রলয় চিশিমকে ক্যাম্পাস থেকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানান। পরে সাংবাদিকরা উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজান উদ্দিনের সাথে দেখা করে তাদের দাবির বিষয়টি জানান।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনসহ বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিনস কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষক সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর সুলতান-উল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ ও বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিলো। এ নিয়ে গত রোববার ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা শিক্ষকদের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল এমনকি শিক্ষকদের বাসভবন, চেম্বার ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক সমিতি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সংগঠন হিসেবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাব ও বাসভবনে হামলার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানান। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতি মানববন্ধন করে। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মু. আজহার আলী, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মু. সাইফুল ইসলাম, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর আফরাউজ্জামান খান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গত রোববার ছাত্রলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় হামলায় ৮ সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এরপর ওই দিন সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।