অসদুপায় অবলম্বন : তিন পরীক্ষার্থীর জেল-জরিমানাসহ পাঁচজন বহিষ্কার

চুয়াডাঙ্গায় প্রাকপ্রাথমিক সহকার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা : অসাধুচক্রের অপতৎপরতা রোধে প্রশাসন ছিলো তৎপর

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গায় প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তিন পরীক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে দুজনকে কারাদণ্ড ও একজনকে অর্থদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে মোবাইলফোন ও হেডফোন ব্যবহার করে উত্তর জেনে নেয়ার অপরাধে ওই তিনজনকে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মেহেরপুরের কোনো পরীক্ষার্থী অবশ্য বহিষ্কৃত বা দণ্ডিত হয়নি বলে আমাদের মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় দণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা হলেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়ার আবু বকরের ছেলে জহুরুল ইসলাম (২৫), দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে তিনা আক্তার (২২) ও একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আকরাম হোসেন (২৫)। এছাড়া বহিষ্কৃতরা হলো- কাহারুল ইসলামের মেয়ে শারমীন আক্তার, হেলাল উদ্দীনের মেয়ে শান্তান ও নওশের আলীর মেয়ে ফারহানা আক্তার।

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাত চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী  জহুরুল ইসলামকে এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে তিনা আক্তারকে পাঁচদিনের ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়কেন্দ্রে আকরাম হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে সাতদিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন। আকরাম জরিমানার টাকা নগদ পরিশোধ করেন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোবাইলফোন ব্যবহার করায় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় জহুরুল ইসলাম ও তিনা আকতার এবং পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ ) আইন ১৯৮০ সংশোধনী ১৯৯২’র ১৩ ধারায় অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষায় সহায়তার অভিযোগে এ দণ্ডাদেশ প্রদান করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবারই প্রথম কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোবাইলফোন, ফ্যানিটি ব্যাগ, বইপত্রসহ বিভিন্ন দ্রবাদি জব্দ করে রাখা হয়। প্রাক-প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিলো ৮ হাজার ২০০ পরীক্ষার্থীর। এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছয় হাজার ৬৩৭ জন, অনুপস্থিত এক হাজার ৩৬৫ জন এবং ৫ জন বহিষ্কার হয়েছেন।

নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় প্রতিবছর একাধিক চক্র মোবাইলফোনসহ প্রযুক্তির সহযোগিতায় বাইরে থেকে উত্তর জানিয়ে চাকরি নিশ্চিত করে আসছে বলে অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। গতবছর চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রের দু পরীক্ষার্থীকে মোবাইলফোনে উত্তর জানা অবস্থায় আটক করে কারাদণ্ডাদেশ হলে সেই চক্রের সাথে জড়িতদের তেমন কাউকে ধরা যায়নি। এ কারণেই এবারও সেই চক্র অভিন্ন কৌশলে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে গুঞ্জন ওঠে। তাদের কেউ কেউ বেশ কিছু পরীক্ষার্থীর সাথে চুক্তিও করে বলে জানা যায়। অবশ্য তাদের তেমন কেউ ধরা পড়েনি। তবে প্রশাসন ছিলো তৎপর। সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিবুর রহমানের দৃষ্টিগোচর হয় এক পরীক্ষার্থীর কানে কাপড়। আড়ালে হেডফোন। তাকে কেন্দ্রের অফিসকক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। পরীক্ষা শেষে তাকে ৫ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী কাজী সায়েমুজ্জামান। যখন দণ্ডাদেশ দেয়া হয় তখনই দণ্ডিত তিনার মোবাইলফোনে যোগাযোগ করে অপর একপ্রার্থী আকরাম হোসেন। এ আকরাম হোসেনই তিনাকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে উত্তর জানানোর পরিকল্পনা করেছিলো। আকরামের মোবাইলফোনটি ঝিনুক পরীক্ষা কেন্দ্রে জব্দ হয়ে গেলে তাদের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। তিনা ও আকরাম মামা-ভাগ্নি বলে পরিচয় দেয়। আকরামকে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (প্রাক-প্রাথমিক) নিয়োগ পরীক্ষা মেহেরপুরে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পরীক্ষায় মোট ৭৯৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। যা মোট পরীক্ষার্থীর শতকরা সাড়ে ১৬ ভাগ। জেলার মোট ১২টি কেন্দ্রে ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের ওই পরীক্ষায় মোট ৪ হাজার ৮৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৩৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসূত্রে জানা যায়, মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়কেন্দ্রে ৭৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬২৫, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭৯, মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজকেন্দ্রে ৩০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৫১, পৌর ডিগ্রি কলেজকেন্দ্রে ৪০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬৫, গোভীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০১, কবি নজরুল শিক্ষা মঞ্জিল কেন্দ্রে ২৬৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০৫, আহমদ আলী টেকনিক্যাল কলেজ কেন্দ্রে ১৭০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৩, মেহেরপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে ৬০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫১১, সরকারি মহিলা কলেজকেন্দ্রে ৪৫০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৭১, আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে ৪শ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩২৩, মেহেরপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজকেন্দ্রে ৩৭৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩২৪ ও জিনিয়াস ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ৩২৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৮১ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামান বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেখেন।