অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ তফসিল পুরোপুরি বাতিলের সিদ্ধান্ত

ছয় লাখ একর জমি অর্পিত তালিকা থেকে বাদ যাবে : বিলুপ্ত হবে জেলা ও আপিল কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার: সংসদের চলতি অধিবেশনেই ‘খ’ তফসিলে প্রকাশিত অর্পিত সম্পত্তির তালিকা বাতিল করা হচ্ছে। এ জন্য অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন-২০০১ পুনরায় সংশোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক যাত্রার আগে ভূমিমন্ত্রীকে আলোচ্য তফসিল বাতিল করতে নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আলোচ্য তফসিল বাতিল করতে আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা এতে সভাপতিত্ব করেন। ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, আইন সচিব জহিরুল হক দুলাল, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব সহিদুল হক, ভূমি সচিব মোখলেসুর রহমান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন) ইব্রাহীম হোসেন খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার শেষ পর্যায়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের সভাপতি রানা দাস গুপ্ত, সুব্রত চৌধুরী, পূজা উদযাপন পরিষদের কাজল দেব নাথ উপস্থিত হন এবং তারা সংশোধিত আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব লিখিত আকারে দেন।

আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ অর্পিত সম্পত্তির খ তফসিল বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, খ তফসিল বাতিল করা হলে অসংখ্য মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই অর্পিত সম্পত্তি (প্রত্যার্পণ) আইন-২০০১ সংশোধন করার বিল উত্থাপন করা হবে এবং পাস করা হবে। ১৯৬৫ সালের পর ফেলে যাওয়া সম্পত্তি সরকার নিয়ে নিয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর দখলে থাকা সম্পত্তি হঠাত করে তহসিলদার খাজনা নেয়া বন্ধ করে তা অর্পিত তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খ তফসিল বাতিলের পর যদি কোনো জমির কোনো বৈধ দাবিদার মনে করে তার জমি অন্য একজন অবৈধভাবে নিয়েছে সে ক্ষেত্রে সে প্রচলিত দেওয়ানি আইনে প্রতিকার চাইতে পারবে। আর খ তফসিল বাতিলের পর এর অন্তর্ভুক্ত সকল জমি সরাসরি তালিকা থেকে বাদ যাবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন) বলেন, খ তফসিলে ছয় লাখ একর জমি রয়েছে। আইন সংশোধন হয়ে গেলে এসব সম্পত্তি অর্পিত বলে বিবেচনা করা যাবে না। তিনি বলেন, মূলত যেসব জমি অর্পিত তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং প্রকৃত মালিক, উত্তরাধিকারী, সহঅংশীদার ইজারা সূত্রে ভোগ দখল করছেন সেসব সম্পত্তিই খ তফসিলভুক্ত। যদি কেউ উপরিউক্ত স্বত্বাধিকারীর কাছ থেকে জমি ক্রয় করে থাকেন তিনিও সংশোধিত আইনের সুবিধা পাবেন।          অ্যাড. রানা দাস গুপ্ত বলেন, তারা চান, আইনটি এমনভাবে সংশোধিত হোক যেন ধরে নেয়া হয় যে, খ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি কখনোই অর্পিত ছিলো না। এ রকম করা হলে অবশ্য ইতোমধ্যে জেলা কমিটি বা আপিল কমিটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হওয়ার বিষয়টি কার্যকর থাকবে না বলে আইনে উল্লেখ করতে হবে। পক্ষান্তরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে যেসব সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তি করে তা উত্তরাধিকারী বা সহঅংশীদার বা প্রকৃত মালিক পেয়ে গেছেন তাদের স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখেও আইন সংশোধন করা সম্ভব।

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা খসড়া বিলে দেখা যায়, খ তফসিল বিলুপ্ত করা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে গৃহিত ব্যবস্থাদি বিলুপ্ত আইনের দ্বারা করা হয়েছে মর্মে গণ্য করা আছে। অর্থাৎ ইতোমধ্যে জেলা কমিটি বা আপিল কমিটির কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আবেদন করার সময় বাড়িয়ে যে সংশোধনী প্রস্তাব সংসদে পাঠানো হয়েছে- এর সাথে যুক্ত করেই খ তফসিল বাতিল সংক্রান্ত সংশোধনী বিল উত্থাপন করার চিন্তা চলছে। আবার নতুন করে মন্ত্রিসভার মাধ্যমে বিলটি অনুমোদন করিয়ে সংসদে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় করা হোক এটি দ্রুততার সাথেই শেষ করা হবে বলে ভূমি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।