অর্ধশত প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন : ভোটকেন্দ্র দখল : ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি অংশ না নিলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অর্ধশত প্রার্থী নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছেন। তারা মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে জাল ভোট প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্র দখলসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জাসদ মনোনীত প্রার্থী এম সবেদ আলী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা না দিলেও তিনি অভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

একটি আসনে প্রার্থী নিজেই ভোট দিতে পারেননি। সকালে গিয়ে দেখেন তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী ডা. ফরিদ আহমেদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে তিনি দেখেন, তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে। এ ঘটনা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসককে মৌখিকভাবে জানানো হলেও এর কোনো প্রতিকার না পেয়ে তিনি তাত্ক্ষণিক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বাঁশখালীতে জাতীয় পার্টি-জেপি প্রার্থী আ.আ.ম হায়দার আলী চৌধুরী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জালভোট প্রদান এবং এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালি আসনে জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী হায়দার আলী চৌধুরীও জাল ভোট প্রদান এবং কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা ব্যাপক জাল ভোট দিয়েছে। ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের তিন প্রার্থীর মধ্যে দু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ দুই প্রার্থী হলেন- একেএম শরীফ উদ্দিন (ফুটবল) ও আজাদ উদ্দিন চৌধুরী (হরিণ)। শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন অন্তত ২৫টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আজাদ উদ্দিন চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তার সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করলে ৱ্যাব লাঠিচার্জ করে। সকালে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ঢাকা-১৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেয়া এক চিঠিতে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান। তিনি অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার মোট ৭০টি কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দিয়েছে। নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান, এজেন্টদের মারধর এবং কারচুপির অভিযোগ এনে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারিপাড়া) আসনের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবিনা আক্তার। গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনে জাল ভোট প্রদান এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ড. আনোয়ার হোসেন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। বরগুনা-২ (বেতাগি-বামনা-পাথরঘাটা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন শিকদার কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান লুইসও একই অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেছেন। মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাসদ প্রার্থী আফজাল হোসেন খান জকি কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। খুলনা-২ আসনের জাতীয় পার্টি-জেপি প্রার্থী রাশিদা করিম জাল ভোট, এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়াসহ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখোনোর অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেছেন। কক্সবাজার-৪ আসনের জাতীয় পার্টির-জাপা প্রার্থী তাহা ইয়াসিন ব্যাপক জাল ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নোয়াখালীর হাতিয়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলাম আমির ভোটারদের ভয়ভীতি, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুপুর ২টার দিকে উপজেলা সদরের ওছখালী বাজারে একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করার ঘোষণা দেন। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান রতন দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুল মজিদের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট কারচুপি ও কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ প্রকৃত ভোটারদের ভোট দিতে না দেয়ার অভিযোগ এনে তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এ সময় তার সমর্থকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, শেরপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী খোরশেদ আলম, শেরপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বদিউজ্জামান বাদশাহ, নারায়ণগঞ্জ-১ এর জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী জয়নাল আবেদিন হাজারি, ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৫ এ জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী মামুনুর রশীদ, বরিশাল-৩ আসনের জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু, পটুয়াখালি-১ আসনে জাসদ প্রার্থী অ্যাড. হাবিবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, দিনাজপুর-৬ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির রবীন্দ্রনাথ সরেন, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৩ আসনে জাপা প্রার্থী যথাক্রমে শঙ্কর পাল, আতিকুর রহমান আতিক এবং হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তানভির আহমেদ, খুলনা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান খান খোকন নানা অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।