অভিযাত্রা সফল করার প্রস্তুতি : খালেদা জিয়ার বাসভবন ও গুলশান অফিস অবরুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশি প্রহরায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে রাজধানীর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তার কার্যালয়। এ দু’স্থানের কোথাও দলের নেতাকর্মীদের কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দিনভর গুলশানে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যায় নির্বিঘ্নে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে বড় দিনের এক সমাবেশে সরকারকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বাধা দিবেন না। যদি আমাদের এই কর্মসূচি পালন করতে না দেয়া হয় তাহলে পরিণতি হবে ভয়াবহ, কঠিন।

জানা গেছে, আগামী রোববার রাজধানীমুখি জাতীয় পতাকা হাতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অভিযাত্রা সফল করতে নানামুখি প্রস্তুতি চলছে ১৮ দলের। একদিকে সারাদেশে তৃণমূলে শক্ত অবস্থান ধরে রাখা, অন্যদিকে অভিযাত্রায় দলমত নির্বিশেষে বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ দুই চ্যালেঞ্জকে জয় করে ২৯ ডিসেম্বরের অভিযাত্রায় অন্তত ২০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিরোধী জোট। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির একাধিক অংশ পৃথক পৃথকভাবে ঢাকামুখে যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের অনুসারীদের মধ্যে বাসযোগে ঢাকায় যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চাইছে। অপরদিকে জেলা বিএনপি দু ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাস অথবা ট্রেন। জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা গতকাল তাদের কার্যালয়ে বসে প্রস্তুতিসভা করেছে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস পক্ষও পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে গতকাল।

সূত্র বলেছে, কৌশলগত কারণে ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে অংশ নেবেন প্রতিটি জেলা থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একটি অংশ। যারা ঢাকা অভিমুখি মার্চে অংশ নেবেন তারা আসবেন গ্রেফতার, দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থানের মানসিক ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করবেন নিজ নিজ এলাকায়। বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমানে ঢাকা ছাড়া প্রায় প্রতিটি জেলায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠছাড়া। জনবিক্ষোভের মুখে প্রহসনের নির্বাচনের প্রস্তুতি দূরে থাক এলাকায় তারা স্বচ্ছন্দে চলাফেরাও করতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করতে শক্ত এ অবস্থান ধরে রাখার বিকল্প নেই। ফলে গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রায় সর্বশক্তিতে অংশ নিতে গিয়ে মাঠ হাতছাড়া না করতেই এ কৌশল নিয়েছে বিরোধী জোট।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালেদা জিয়ার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। একইভাবে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার, বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকেও আটক করে। তবে গোয়েন্দা কার্যালয় বা থানায় না নিয়ে ধানমণ্ডিতে তার বাসার সামনে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। একইভাবে প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সাংবাদিক শফিক রেহমানকেও গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। গুলশানের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মধ্যেই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেখানে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন। শুধু খালেদা জিয়ার বাসভবনই নয়, ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুরো রাজধানীতেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির একাংশ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে গতকাল বেলা ২টায় কেদারগঞ্জস্থ কার্যালয়ে এক জরুরিসভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য জেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি মুহ. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল, খাজা আবুল হাসনাত, হাজি মুজিবর রহমান, মাহমুদুল হক পল্টু, রওফুন নাহার রীনা, অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম প্রমুখ। অপরদিকে জেলা বিএনপির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের কোটপাড়াস্থ কার্যালয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা আইনুর হোসেন পচা, প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের যুগ্মসম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, হামিদুল হক নেতাজী প্রমুখ।