অবরোধ চলাকালে পুলিশি নির্যাতনে নিহত নেতা-কর্মী ও কাদের মোল্লার মাগফেরাত কামনা

বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে পালিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধ চলাকালে পুলিশি নির্যাতনে নিহত নেতা-কর্মী ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। গতকাল বাদ জুম্মা চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ স্থানেই এ জানাজার আয়োজন করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে দলীয়ভাবে জানানো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, বিএনপির অপরাংশ, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী লে.কর্নেল (অব) কামরুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকেরা পৃথক পৃথক স্থানে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। দর্শনা, সরোজগঞ্জ, অলমডাঙ্গা, জীবননগর, দামুড়হুদাতেও গায়েবানা জানাজায় নিহত নেতাকর্মীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজাসহ বিশেষ মোনাজাতও করা হয়। জানাজাপূর্ব আলোচনাসভায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ বর্তমান সরকারকে খুনি সরকার বলে অখ্যায়িত করে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে সকলের জন্য সমান পরিবেশে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান।

এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নীল নকশার নির্বাচন বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে ১৮ দলের ডাকে গত ৬ দিন শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালীন পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাব এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় সারাদেশে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এম. জেনারেল ইসলাম, অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মালিক মজু, আবু জাফর মন্টু, রবিউল ইসলাম লিটন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মো. ফজলুর রহমান, মোখলেছুজ্জামান মোখলেছ, আরিফুজ্জামান পিন্টু, এমএ তালহা, রাজিব খান, আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

গায়েবানা জানাজা শেষে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। জানাজা এবং দোয়া পরিচালনা করেন ওলামাদলের নেতা মো. জাহিদুল ইসলাম।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজা পরিচালনা করেন জেলা ওলামাদলের যুগ্মআহ্বায়ক হাফেজ মাহবুবুর রহমান। জানাজাপূর্বে  সংক্ষিপ্ত সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর ১৮ দলীয় জোটের আহ্বায়ক মফিজুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাসায়াতের ইসলামীর শুরা সদস্য অ্যাড. আসাদুজ্জামান, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, চুয়াডাঙ্গা পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, দামুড়হুদা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান বাচ্চু, জেলা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দীনু প্রমুখ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি অর্থ বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের উদ্যোগে জানাজা ও স্মরণসভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক আইনুর হোসেন পচা। প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হবি। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আরশেদ আলী কালু, জেলা মৎস্যজীবীদলের আহ্বয়াক আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল, সাধারণ সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, কৃষকদলের সভাপতি হামিদুল হক নেতাজী প্রমুখ। জানাজা পরিচালনা করেন মাও. মো. সাইফুল্লাহ।

বিএনপি নেতা লে. কর্নেল কামরুজ্জামানের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ওহাব মল্লিক। প্রধান অতিথি ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি এবিএম হাসান হাসু। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি নেতা লে. কর্নেল কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলী হোসেন। বক্তব্য রাখেন খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, মহাসিন আলী বিশ্বাস, মফিজুর রহমান মনা, সৈয়দ শরিফুল আলম বিলাস প্রমুখ।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা জামায়াতের উদ্যোগে গতকাল বিকেলে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলারমাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির আনোয়ারুল হক মালিক, সদর থানা আমির আব্দুর রউফ মিয়া, সেক্রেটারি খাইরুল ইসলাম, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির একাংশের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, পদ্মবিলা  ইউনিয়ন আমির ছানোয়ার হোসেন, সাবেক আমির আব্দুল রহমান খান, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন আমির ওসমান গনি, তিতুদহ ইউনিয়ন আমির রেজাউল করিম প্রমুখ। দোয়া পরিচালনা করেন সরোজগঞ্জ জামে মসজিদের ঈমাম অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল হাওলাদার।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শহরের কেপি বসু সড়কে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির আয়োজনে গায়েবানা জানাজায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেয়। জানাজা পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদের পেশ ইমাম কামরুজ্জামান। জানাজার শুরুতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান দলীয় নেতা-কর্মী ও মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. এমএ মজিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনা, বিএনপি নেতা এসএম মশিউর রহমান আব্দুল আলীম উপস্থিত ছিলেন। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সকল দলের সকল নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান অতিথি বলেন, অবিরাম সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ফ্যাঁসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। জনতার বিজয় সন্নিকটে।

আলমডাঙ্গা ব্যরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পাশের চাতালে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পরিচালনা করেন অধ্যাপক আব্দুল খালেক। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির সম্পাদক শেখ সাইফুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন নুর মোহাম্মদ টিপু, ইসরাফ হোসেন, চেয়ারম্যান দারুস সালাস, আজিজুর রহমান পিন্টু, এমদাদুল হক ডাবু, আনোয়ার হোসেন, বোরহান উদ্দিন, মহিনুল ইসলাম, অ্যাড. রবগুল হোসেন, প্রমুখ।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় গায়েবানা জানাজা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আছর নামাজের পর দর্শনা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে অনুষ্ঠিত জানাজার আগে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মো. রুহুল আমিন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপি একাংশের সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত, দর্শনা পৌর জামায়াতের আমির আব্দুল কাদের, বিএনপি নেতা ফজলুল হকসহ বিএনপি, জামায়াত তথা ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। বক্তব্যকালে বক্তারা বলেন, আ.লীগ তথা মহাজোট সরকার আব্দুল কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের সাজিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির নাটক মঞ্চস্থ করে এ দেশের  মানুষের মন থেকে ইসলামি আন্দোলন মুছে ফেলা যাবে না। তার রক্ত থেকে হাজারো মোল্লা জন্ম নেবে এবং আওয়ামী স্বৈরাচার বিদায় করে ছাড়বে। জানাজা শেষে দোয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপি-জামায়াত তথা ১৮ দলের অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দামুড়হুদার বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা ৬ দিনব্যাপি ১৮ দলীয় জোটের ডাকে অবরোধ চলাকালীন সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত দলীয় নেতাকর্মী ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার রূহের মাগফেরাত কামনায় গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা উপজেলার মুন্সিপুর জামে সমজিদে ও কাঁঠালতলায়, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা শহরের ব্রিজমোড়ে এবং বিকেল ৪টার দিকে মোক্তারপুর মোল্লা বাজারে এ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাও. আজিজুর রহামান, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়র জামায়াতের আমির প্রভাষক শরীফুল আলম মিল্টন, উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাও. আব্দুস সাত্তার, সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি মনিরুল আলম মুকুল, ওয়ার্ড সভাপতি শহিদুর রহমান, আশাদুল হক, আবুবকর, আবুল বাসার, মতিয়ার রহমান, ইকতিয়ার রহমান, মেহেদি হাসান, শরগত আলী, ছুট্টু, তেতুল মিয়া, আব্দুল কাদের প্রমুখ গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লার রুহের মাগফেরাত কামনা করে মেহেরপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা মেহেরপুর ট্রাষ্ট মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত নামাজ পরিচালনা করেন পৌর আমির মাহবুবুল ইসলাম। এ সময় জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন প্রমুখ। শেষে সেখানে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মেহেরপুর সদর উপজেলা কামদেবপুর স্কুলমাঠে অপর একটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইমামতি করেন সদর উপজেলা জামায়াতের আমির ডা.জামাল উদ্দিন।