অবরোধ ও হরতাল : বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর : ফেনীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মাদরাসা ছাত্র নিহত

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অবরোধকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ : কোটচাঁদপুরে একজনকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ

 

মেহেরপুরের রাজনগরে কেটে দেয়া হয়েছে ক্যাবল : চুয়াডাঙ্গার সাথে দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের টেলিযোগাযোগ বিছিন্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের তৃতীয় দফা অবরোধের পঞ্চম দিন ও জামায়াতের পর পর তিন দিনের হরতালের শেষ দিন গকাল বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সিরাজগঞ্জে ট্রাক উল্টে একজন এ ফেনীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ঘে এক মাদরাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের মধ্যবর্তী রাজনগরের টেলিফোনের অপিটিক্যাল ফাইবার কেটে দেয়ায় চুয়াডাঙ্গার সাথে সারাদেশের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে টেলিযোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে টেলিযোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল তেমন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। ঝিনাইদহের কোর্টচাঁদপুরে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। কালীগঞ্জে পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। মেহেরপুরে গতকালও রাজনগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।

অবরোধ-হরতাল চলাকালে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ দু শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে এক মাদরাসা ছাত্র মারা গেছে। খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, নড়াইল, গাইবান্ধা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের গাড়ি এবং সাবেক শিল্পমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দু জনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। ঈশ্বরদীতে পেট্রোল বোমার আঘাতে মা-মেয়ে আহত হয়েছেন। দিনাজপুরে হাজি দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। এছাড়া যশোর-খুলনা মহাসড়ক, মিঠাপুকুরসহ কয়েকটি স্থানে শ শ সরকারি গাছ কেটে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের তফশিল বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তৃতীয় দফা এ অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। গতকাল তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে জামায়াত। সিরাজগঞ্জে ট্রাক উল্টে পাবনার একজন নিহত হয়েছে।

এদিকে চুয়াডাঙ্গার সাথে সারাদেশের টেলিযোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হলে টেলিফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিটিসিএল’র চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবু তাহের বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের দ্বিনদত্ত ব্রিজের কাছে অপটিক্যাল ফাইবার কেটে দিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। এ কারণে সারাদেশের সাথে চুয়াডাঙ্গার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেরও যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। অবরোধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিছিন্ন করা ক্যাবল পুনসংযোগ সম্ভব নয়।

১৮ দলের ডাকে অবরোধের সমর্থনে জেলা বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল করে। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল করে জেলা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- এম জেনারেল ইসলাম, অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, শহিদুল ইসলাম রতন, মজিবুল হক মালিক মজু, আবু জাফর মন্টু, চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম লিটন, আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মো. ফজলুর রহমান, মোখলেছুজ্জামান মোখলেছ, ইমরুল হাসান জোয়ার্দ্দার মুকুল, আরিফুজ্জামান পিন্টু, স্বাধীন অধিকারী, এমএ তালহা, মঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান প্রমুখ। বক্তারা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফুজ্জামান সিজারের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা সাদ্দাম, সোহেল ও হিরকের মুক্তি দাবি করেন।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ও নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের পঞ্চম দিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সাংগঠনিক সম্পাদক রউফুন নাহার রিনার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন যুগ্মসম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দপ্তর সম্পাদক আবু আলা সামসুজ্জামান, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. হেদায়েত হোসেন আসলাম, যুবদলের সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, সদর থানা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, পৌর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইয়াছিন হাসান কাকন, জেলা ওলামদলের আহ্বায়ক মাও. আনোয়ার হোসেন, যুগ্মআহ্বায়ক হাফেজ মাহাবুবুল আলম, জেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক শাহাজাহান খান, তরুণদলের যুগ্মআহ্বায়ক সাইদুর রহমান, মমিন খান, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক হাজি রবিউল হক মল্লিক, যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল হক প্রমুখ।

ভ্রাম্যমা প্রতিনিধি মামুন কাইরুল জানিয়েছেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড বাতিলের দাবিতে জামায়াত ঘোষিত হরতাল ও ১৮ দল ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর জামায়াত। সকাল ৮টা থেকে জামায়াতের শ শ কর্মী সমর্থক আলমডাঙ্গার হাউসপুর কুষ্টিয়া সড়কে অবস্থান নিয়ে রোডে টায়ার জ্বালিয়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। হরতালের সমর্থনে সমাবেশে পৌর জামায়াতের আমির মীর আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি  ছিলেন উপজেলা আমির নূর মুহাম্মদ হুসাইন টিপু। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর নায়েবে আমির নজরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি নাগদাহ ইউপি চেয়ারম্যান দারুস সালাম, শিবিরের জেলা অফিস সম্পাদক মামুন রেজা, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ রবিউল ইসলাম, শিবিরের উপজেলা সভাপতি আশরাফুল আলম, পৌর সভাপতি আশরাফুল হক, উপজেলা সেক্রেটারি নাসির উদ্দিন, পৌর সেক্রেটারি সাকিবুর রহমান, ডাউকি ইউনিয়ন আমির আব্দুল মান্নান, কুমারী আমির বিলাল হুসাইন, কালিদাসপুর ইউনিয়ন সভাপতি আশরাফুল আলম, সেক্রেটারি হারুন অর রশিদ, বেলগাছি ইউনিয়ন সভাপতি শওকত আলী, সেক্রেটারি জহুরুল ইসলাম, নাগদাহ ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল কাদের, সেক্রেটারি আমজাদ হোসেন, আইলহাস ইউনিয়ন সভাপতি মানোয়ার হোসেন, সেক্রেটারি আব্দুল লতিফ ঝন্টু, জামজামী ইউনিয়ন সভাপতি সেলিম রেজা প্রমুখ।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গতকাল বুধবার অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদল এ হরতালের ডাক দেয়। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে তারা এ হরতাল ডাক দেয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ হরতাল চলবে।

কালীগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক থানা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, তারা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানি করে আসছে। তারা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ উপজেলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করা হয়েছে এবং অর্ধদিবস হরতাল সফল করার লক্ষ্যে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ঝিনাইদহে ১৮ দলের ডাকা অবরোধের ৫ম দিনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ সময় টিয়ারসেল ও শটগানের গুলিবর্ষণ করেছে। জেলার কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। ফলে জেলার ওপর দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। জেলা শহরের আরাপপুরে, হামদহ, চাকলাপাড়া, বাসটার্মিনাল এলাকায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। আরাপুর মিছিলে নেতৃত্বদেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া নামক স্থানে গতকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করার সময় পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ সময় ৫/৬ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

একই উপজেলার কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের লাউতলা, এলাঙ্গী ও তালেশ্বর নামক স্থানে সকাল থেকে সড়কে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ, বিজিবি ও ৱ্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ তুলে দেয়। জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কোটচাঁদপুরে দুর্বৃত্তরা এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গতকাল বুধবার প্রকাশ্য দিবালোকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। এর আগে ওই নেতার বাসায় রাতে ককটেল হামলা হয়। রাতে ককটেল হামলার জন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে। কোটচাঁদপুর উপজেলার হরিন্দীয়া গ্রামের ফয়জুদ্দীনের ছেলে কুশনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম মোংলা (৪৫) সকালে হরিন্দীয়া বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলো। এ সময় ৭/৮ জন মুখোশধারী ব্যক্তি মোংলার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে সে দৌঁড়ে দোকানে গেলে দুর্বৃত্তরা দোকানের ভেতর তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। উপস্থিত লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে প্রথমে কোটচাঁদপুর হাসপাতাল ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কাদের মোল্লাসহ আটককৃত সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ  মিছিল করে ছাত্রশিবির। সকাল ১০টার দিকে ঝিনাইদাহের ডাকবাংলা বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে ডাকবাংলা ত্রিমহনি বাজার ঘুরে বাসস্টান্ডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়। ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে জামায়াত-শিবিরের এ মিছিলের নেতৃত্ব দেন ঝিনাইদহ সদর  পশ্চিম শাখার সভাপতি মো. নাজমুল হোসাইন । এ সময় শিবির নেতৃবৃন্দ হরতাল অবরোধসহ আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। আটক নেতাদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন জামায়াত-শিবির নেতৃবন্দ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে সারাদেশের মতো মেহেরপুর জেলার মানুষের মাঝেও উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তবে জামায়াত-শিবিরের যেকোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দমনে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সদস্য। আতঙ্কিত না হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার রাত থেকেই জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বিভিন্ন সড়কে ১০ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সতর্কতাবস্থায় রয়েছেন ৱ্যাব-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া বুধবার সকাল থেকেই বিজিবির ৩ প্লাটুন সদস্য টহলে রয়েছেন। পাশাপাশি ৱ্যাবের কয়েকটি দল বিজিবি-পুলিশের সাথে কাজ করছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের আওয়ামী লীগকর্মী মিলন হোসেনকে (২৮) কুপিয়েছে অবরোধকারীরা। গতকাল বুধবার রাত আটটা দিকে রাজনগর মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। মিলন হোসেন রাজগনর গ্রামের ছলিম উদ্দীনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিলন হোসেন বাড়ির সামনে অবস্থান করার সময় তার ওপরে হামলায় চালায় অবরোধকারী জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেয়া হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে। অবরোধের সময় বিভিন্ন এলাকার সবজি বোঝাই নসিমন পার করে দেয়ার অপরাধে এ ঘটনা ঘটেছে বলে আহতে পক্ষের লোকজন জানিয়েছেন। তবে অবরোধকারীদের অভিযোগ, নসিমন প্রতি একশ টাকা নিয়ে সহযোগিতা করছিলো মিলন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে গণ্ডগোল হয়। মেহেরপুর সদর থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শহরের বড়বাজার এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি শহরের কয়েকটি দোকানের সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও বিভিন্ন দোকানের সাটারে লাঠি দিয়ে পেটায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাদ মাগরিব মেহেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবিরের বেশ কিছু নেতাকর্মী শহরের বড়বাজার চার রাস্তার মোড়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রদর্শন ও স্লোগান দিতে দিতে শহরের এশিয়া নেটওয়ার্ক মোড় পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ চলাকালে তারা কাজল ব্যাটারি ঘরের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে এবং দত্ত স্টোর অ্যান্ড বাতাসা হাউজ, তিথি মোবাইল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সের দোকানসহ সড়কের দু পাশের বেশ কিছু দোকানের সাটারের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌছায়। তার আগেই তারা তাদের মিছিল শেষ করে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঝটিকা মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ সাব্বির, সদর থানা সভাপতি আব্দুর রহিম প্রমুখ।

১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধে গতকাল বুধবার মেহেরপুরে রাজনগরে দেড় কিলোমিটার সড়ক গাছের ডালপালা ফেলে মানুষ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে অবরোধকারীরা। এছাড়াও সকাল থেকে কায়েম কাটার মোড়, বন্দর ও গৌরিনগরে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জোটের নেতাকর্মীরা।

ভোর থেকেই মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর মোড়ে জড়ো হয় হাজারো জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। সেখানে নারী কর্মীরাও অবস্থান নেয়। দিন দত্ত ব্রিজ থেকে ঘোড়ামারা ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে গাছের ডালপালা ও ইটপাটকেল ফেলে মানুষ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। অবরোদের নেতৃত্বে রয়েছেন আমঝুপি ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল জাব্বার। গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলছিলো। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত জামায়াতের ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ের বিষয়ে রাজনগরের অবরোধের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন অবরোধাকারীরা।

মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর মোড়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অবরোধ করেন জোটের নেতাকর্মীরা। সড়কে টায়ারে আগুন দিয়ে লাঠি মিছিল করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রুহুল আমিন। উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা সাবেক মেম্বার আব্দুল জাব্বার ও আব্দুল কুদ্দুস মেম্বারসহ নেতৃবৃন্দ।

মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েম কাটার মোড়ে অবরোধ করেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। সেখানে গাছের ডালপালা ও ইট ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন অবরোধকারীরা। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা শিবিরের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সোহেল রানা ডলারসহ নেতৃবৃন্দ।

মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের গৌরিনগর এলাকায় অবরোধ করেন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। কয়েক দফা টায়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন মুজিবনগর উপজেলা জামায়াতের আমির মশিউর রহমান ও সেক্রেটারি খান জাহান আলী। উপস্থিত ছিলেন- জেলা শিবিরের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক গাজী ও মুজিবনগর উপজেলা শিবিরের সভাপতি মোকলেছুর রহমান।

এদিকে অবরোধের কারণে গত কয়েক দিন থেকেই আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধ উঠে যাওয়ার পরে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে।