অবরোধের শেষ দিনেও সারাদেশে সহিংসতা : লক্ষ্মীপুরে যুবদল নেতাসহ নিহত ৫

মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের মিছিলসহ সড়কে অবস্থান

স্টাফ রিপোর্টার: তৃতীয় দফা টানা অবরোধের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নিহত হয়েছে ৬ জন। এদের মধ্যে শুধু লক্ষ্মীপুরেই র‌্যাব-পুলিশের গুলিতে এক বিএনপি নেতাসহ ৪ জন এবং সংঘর্ষ চলাকালে পিকেটারদের বেধড়ক পিটুনিতে অজ্ঞাত আরো এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ফেনীর মহিপালে পিকেটারদের ইটের আঘাতে গুরুতর আহত কাভার্ডভ্যান চালক চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। চুয়াডাঙ্গা বিএনপি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে অবরোধপালন করায় জেলাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মিছিলও করেছে বিএনপি একাংশ। সরোজগঞ্জে মিছিল বের করে জামায়াত-বিএনপি।

লক্ষ্মীপুরে বৃহস্পতিবার ভোরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাবউদ্দিন সাবুর বাসভবনে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতারের ঘটনার জের ধরে ১৮ দলের কর্মী-সমর্থকদের সাথে র‌্যাব-পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে জেলা যুবদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ জুয়েল নিহত হন। এ ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে বিএনপি নেতা মো. মাহবুবুর রহমান, শিবিরকর্মী মো. মামুনুর রশিদ ও মো. সিহাব মারা যান। র‌্যাবের সোর্স সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা যাওয়া যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। (৩ পাতার ৫ কলামে দেখুন)

১৮ দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে জেলা বিএনপি গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা কার্যালয়ে শেষ হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ৬ দিন টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এম. জেনারেল ইসলাম, অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, আবু জাফর মন্টু, মজিবুল হক মালিক মজু, মো. ফজলুর রহমান, সুশীল কুমার, মঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, স্বাধীন অধিকারী, শহীদ হোসেন লাড্ডু, আরিফুজ্জামান পিন্টু, ফারুক আহ্মেদ প্রমুখ।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডঙ্গা সরোজগঞ্জ ১৮ দলের উদ্যোগে সরোজগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিলি বের করা হয়। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদ মার্কেটের সামনে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে।  সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির আনারুল হক মালিক, সদর থানা আমির আব্দুর রউফ মিয়া, সেক্রেটারি খাইরুল ইসলাম, থানা বিএনপি একাংশের সভাপতি আইনজীবী সমিতির সভাপতি এসএম শাহাজাহান মুকুল, যুগ্মসম্পাদক আব্দুল হান্নান, সহপ্রচার সম্পাদক শাইফুল ইসলাম, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরনবী সামদানি, সাধারণ সম্পাদক রুমজান আলী প্রমুখ।    এ সময় চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কে সরোজগঞ্জ মসজিদ মার্কেটের সামনে ৩ ঘণ্টা ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা রাস্তার ওপর বসে পড়ে অবরোধ করে রাখে।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কে গাংনী উপজেলার বামন্দী বাজার এলাকায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের উদ্যোগে অবরোধ করা হয়। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে টায়ারে আগুন দিয়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাস, বামন্দী ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক বেল্টুসহ নেতৃবৃন্দ।

ডাকবাংলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডাকবাংলা থেকে অবরোধের শেষ দিনে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যায়নি। জেলার কোথাও কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার ৮টায় ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে জেলা বিএনপি একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটিতে নেতৃত্বে দেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। এছাড়া পবহাটি ট্রাকটার্মিনাল এলাকায় সুজনের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বের করে বিএনপি।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ১৮ দলীয় জোটের টানা অবরোধের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপির বাবু খান গ্রুপের উপজেলা ও পৌর ছাত্রদল। এছাড়াও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা বিএনপি একাংশের নোয়াব আলী গ্রুপ। এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এ গ্রুপের উপজেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদল।

বেলা ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপি একাংশের নোয়াব আলী গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা আক্তার রিনি, পৌর বিএনপি সভাপতি পৌর কাউন্সিলর মশিউর রহমান, কাউন্সিলর হযরত আলী, কাউন্সিলর সামসুজ্জামান হান্নু, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক আনিছুর রহমান শিপলু, যুবদল সভাপতি আবুল হোসেন, বিএনপি নেতা আবু বকর সিদ্দিক, হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

বিকেলে বাবু খানের কার্যালয় থেকে উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদল নেতা আল ইমরান সুমন, সাইফুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, আব্দুস সামাদ, আনোয়ার হোসেন, সারোয়ার হোসেন প্রমুখ।

একই সময়ে বিএনপি একাংশের নোয়াব আলী গ্রুপের উপজেলা, পৌর ও কলেজ ছাত্রদল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্রদল নেতা হাসানুজ্জামান হাসান, আশরাফুল ইসলাম রয়েল, শরিফুল ইসলাম, সুজন, ইয়াদুল, বাপ্পা, মোবারক হোসেন, সাগর, সুমন, মামুন ও আলামিন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, অবরোধের ৬ষ্ঠ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের বন্দর, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগর ও মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা। এদিন সকাল ৭ টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর পিটিআই সড়কে মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ফারুক হুসাইন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাও. রুহুল আমীন প্রমুখ। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের রাজনগরে জামায়াত নেতা মশিউর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ওই সময় বিক্ষোভ মিছিলে শ’ শ’ জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মী অংশ নেয়। ওই সময় সেখানে মহিলা জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া দীনদত্ত ব্রিজ থেকে ঘোড়ামারা ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে ও বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। বিকেলের দিকে তারা ঘোড়ামারা ব্রিজের কাছে চুয়াডাঙ্গার মৌসুমী ফুডের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া মেহেরপুর-কাথুলী সড়কে কায়েমকাটার মোড় সড়কে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি তারিক মো. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শ শ ১৮ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর নামক স্থানে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

মেহেরপুর আরও অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশিদ হাবীবসহ ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে সদর উপজেলার বন্দর পিটিআই’র সামনে জেলা ছাত্রদলের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল ও সামাবেশ করেছে। ছাত্রদল নেতা আহম্মেদ রাজীব খান ও সোহেল হোসেনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি পিটিআই সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে পিটিআই’র সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা আহম্মেদ রাজীব খান, সোহেল হোসেন, মনিরুজ্জামান রনি, হিজবুল হাসান খান, রাশেদুজ্জামান বাপ্পি, ইসমাইল হোসেন (জমিদার), বাবু সাবের, সাইদুর রহমান সুজন, খোরশেদ আলম, রেজওয়ান আহম্মেদ রুমি, শাহিনুল ইসলাম, উজ্জ্বল, ছোট রাজীব প্রমুখ।