অবরোধ দিয়ে নতুন বছরের যাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির মাঝে আজ বুধবার শুরু হলো নতুন বছর ২০১৪। অবরোধ কবে শেষ হবে তা এখনও জানে না কেউ। বর্ষবরণের দিন থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য টানা অবরোধ কর্মসূচি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটিই প্রথম।

আর এ ধরনের একটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর শংকার মধ্যেই আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে ব্যালট পেপার পাঠানোর কাজ। ১৫৩টি নির্বাচনী এলাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় ওইদিন ভোট হবে ১৪৭টি আসনে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী কাজে সিভিল প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনীও কাজ শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন এখন নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। প্রধান বিরোধীদল অবশ্য এ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি দলের সাথে বিরোধীদলের বিরোধ শুরু হয় সংসদে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর। সরকারি দল এবং বিরোধীদলের মধ্যে সৃষ্টি হয় চরম আস্থাহীনতার। কেউ কাউকে আস্থায় আনতে না পারার পরিণতিতে বিদায়ী বছরের শেষ দু মাসের বেশিরভাগ সময় দেশ অচল থেকেছে হরতাল-অবরোধে। আর্থিক জট লেগেছে দেশের গোটা অর্থনীতিতে। এ জট তৈরি করেছে কঠিন এক অনিশ্চয়তা।

বিরোধীদলের অন্দোলনের সাথে যুক্ত হয় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের ইস্যুটি। ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী এ বিচারের বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধের বাইরে বেশকিছু কর্মসূচি দিলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। এ বিচার নিয়ে বিএনপি রয়েছে অনেকটাই নিশ্চুপ। এমনকি বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এ অপরাধের অভিযোগে দণ্ডিত হলেও তারা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। যদিও গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দেশকে এক ধরনের অচল করে রাখা হয়। এখন নতুন বছরেও সে অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। কবে যে এ অস্থিরতা শেষ হবে তার কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। দু পক্ষই তাদের নৈতিক অবস্থানে অনঢ় রয়েছেন।

নতুন বছরের শুরুতেই বিএনপি’র টানা অবরোধ কর্মসূচি সম্পর্কে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিলো বলে মনে হয় না। কারণ ৫ জানুয়ারি একতরফাভাবে নির্বাচন করে ফেলার সব প্রস্তুতি সরকার নিয়ে ফেলেছে। তাই এ নির্বাচনকে বর্জন করার জন্য এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির বিকল্প আর কি হতে পারে। তিনি বলেন, আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে বছর শুরু হলেও ধীরে ধীরে অনিশ্চয়তার মেঘ কেটে যেতে পারে। কারণ সবার আগে দেশ এবং মানুষ। একটা পর্যায়ে সকলেই বিবেচনা করবেন বলে আশাকরি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে বলেন, বছরের প্রথম দিনই অবরোধ দেয়া ভালো হয়নি। বছরের প্রথম দিনটি মানুষ একটু আনন্দে কাটাতে চায়। কিন্তু বিরোধীদল মানুষের কোনো ইচ্ছে বা বিবেচনাকে আমলে নিচ্ছে না। কারণ তারা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে দেখেছে যে তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে বছর শুরু হলেও আশাকরি অন্ধকার কেটে যাবে খুব দ্রুতই। মানুষ আলোর দিকে ছুটবেই। যারা এর সাথে এগুতে পারবেন না তারা ক্রমশ পেছনে পড়বেন।