অন্তঃসত্ত্বা : লোকলজ্জায় পিতার বিষপানে আত্মহত্যা : অভিযুক্ত সুমন পলাতক

গাংনী মহাম্মদপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বামী পরিত্যক্তার দেহভোগের অভিযোগ

 

মহাম্মদপুর থেকে ফিরে মাজেদুল হক মানিক: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্বামী পরিত্যক্তার দেহভোগের অভিযোগ উঠেছে স্কুলশিক্ষক সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিচার না পেয়ে লোকলজ্জায় বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন ওই মেয়ের পিতা আজগর আলী। পরশু সোমবার বিকেলে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন। তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। আজগর আলী মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামের হিফাজ উদ্দিন ওরফে হিপার ছেলে। বিয়ের প্রলোভনে তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ের দেহভোগের অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের স্কুলশিক্ষক সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে। তার মেয়ে এখন অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত সুমন।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, মহাম্মদপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ধর্মীয়) সাইফুল ইসলাম সুমন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবেশী দরিদ্র কৃষক আজগর আলীর স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি পরিবারসহ গ্রামবাসীরা জেনে যায়। গত রোববার মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা করালে অন্তঃসত্ত্বা ধরা পড়ে। এতে পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে সুমনের সাথে দৈহিক সম্পর্কের বিষয়টি জানায় আজগর আলীর মেয়ে।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, বিয়ের প্রলোভনে সুমন তার দেহভোগ করে। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে সুমন। রাজি না হলে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় তাকে। তার পিতাকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় মীমাংসার প্রস্তাব দেয় সুমন ও তার পরিবারের সদস্যরা। এতে রাজিও হন দরিদ্র আজগর আলী। কিন্তু বাঁধ সাধেন তার পরিবারের লোকজন। একদিকে সুমনের পরিবারের অব্যাহত হুমকি অন্যদিকে লোকলজ্জার ভয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মহননের পাপে জড়িয়ে পড়েন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে আজগর আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রামে দু দফা সালিস বৈঠক হয়। তবে তার আগেই আত্মগোপন করেন অভিযুক্ত শিক্ষক সুমন। বিষয়টি মীমাংসা ও চেপে যেতে আজগর আলীর ওপর হুমকি অব্যাহত রাখে প্রভাবশালী সুমনের পরিবার। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়ের পিতার মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার সুমনকে সাময়িক বহিষ্কার করে।

আজগর আলীর শ্যালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনা জানাজানি হলে তারাও চেয়েছিলেন মীমাংসা হোক। কিন্তু সুমনের পরিবারের চতুর সদস্যরা বিভিন্নভাবে তাদের নাজেহাল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। তাদের চাপে পড়েই আজগর আলী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন মেয়েটির কী হবে? পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তির শূন্যতায় পরিবারেরই বা কী হবে? অসহায় পরিবারটিকে বাঁচাতে প্রশাসন, সমাজ, সাংবাদিকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাম্মদপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবুল হাশেমের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সুমন বড়। মাদরাসায় লেখাপাড়া শেষ করে গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার বিথি একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাইফুল ইসলাম সুমন গ্রামের পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার নাটনাপাড়া জামে মসজিদে ইমামতি করেন। গ্রামের সবাই তাকে সুমন হুজুর বলে জানেন। এমন একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনৈতিক ওই কাজের অভিযোগ উত্থাপন হওয়ায় পরিবার ও তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেমনি বিব্রত তেমনি সামাজিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই নারীর গর্ভের অনাগত সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও সুমনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন গ্রামের অনেকেই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে গতকাল দুপুর সুমনের বাড়িতে যাওয়া হয়। কথা হয় সুমনের মা সাহার বানুর সাথে। তিনি জানান, আজগর আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্বামী ও তিন ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। সুমন এ ঘটনার সাথে জড়িত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ওই মেয়েটি সুমনের ক্ষেতে কাজ করতো। এ সুযোগে গ্রামের কিছু মানুষ তার ছেলের ওপর দায় চাপাচ্ছে। তাহলে কেন জরিমানা দিতে রাজি হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা গরিব মানুষ তাই রাজি হয়েছি। তবে সুমনের মোবাইল নম্বর কিংবা তার খোঁজ দিতে পারেননি তিনি।

আজগর আলীর মরদেহ কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে বাড়িতে আনা হয়। জানাজা শেষে গতকালই দাফন সম্পন্ন হয়। গতকাল পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ করা হয়নি। আজ বুধবার সকালে থানায় মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন আজগর আলীর শ্যালক জাহাঙ্গীর আলম।