অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন : বাসভবনের সামনের সড়কে দু পাশে বালুর ট্রাক গৃহবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া!

ঢাকা অফিস: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে গতকাল শনিবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নয়াপল্টনে যেকোনো মূল্যে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে এতে খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানোর পরপরই পুলিশ ও ৱ্যাবের পাহারা জোরদার করা হয়। রাত ৮টায় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি বের হননি। গতকাল বিএনপির সহসভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদের সংবাদ সম্মেলনের পর খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের সামনের সড়কে দু পাশে বালুর ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশ। ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে মহিলা পুলিশও।

‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তার বাসভবন ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ প্রটোকল প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। ব্যারিকেড সরিয়ে খালেদা জিয়া আজকের কর্মসূচিতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তা আটকে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার বাসভবনের সামনের দু দিকের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে দুটি বালুভর্তি ট্রাক। বিরোধীদলীয় নেতার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিরোধীদলীয় নেতার মর্যাদা অনুসারে প্রাপ্য পুলিশি প্রটোকল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত সমস্ত প্রটোকল ও পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে তাদের বদলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, মহিলা পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি অবস্থান নিয়েছে। অফিস অভিমুখে যাওয়ার রাস্তা দুটি বন্ধ করে সেখানেও অসংখ্য র‌্যাব ও বিজিবি অবস্থান করছে। এছাড়া, রাস্তার দু ধারেই ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাই মরহুম সাঈদ এস্কান্দারের ছেলের বিয়েতে যোগদানের জন্য তার প্রথমে গলফ ক্লাবে ও পরে গুলশান কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাতে বিকল্প ধারা প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও জাসদ (রব) সভাপতি আসম আবদুর রবের নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট নামে নবগঠিত রাজনৈতিক জোটের শীর্ষনেতাদের সাথে বৈঠকের কথা ছিলো।

এদিকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে কেন্দ্র করে গত তিন দিন ধরে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ছাড়া কোনো নেতাকর্মীকে বাসভবনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের কয়েকজনকে সেখান থেকে গ্রেফতার ও কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়া হয়। কাউকে কাউকে আটক করে পৌঁছে দেয়া হয় তাদের বাসায়। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে কয়েক ঘণ্টা একাকী অপেক্ষা করতে হয় খালেদা জিয়াকে। পরে তার সাথে কয়েকজন সাংবাদিক নেতা সাক্ষাৎ করেন। গতকাল বিকেলে তার বাসভবন ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সূত্র জানায়, রাত ৮টার দিকে দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাসভবন থেকে বেরোনোর প্রস্তুতি নেন খালেদা জিয়া। এ সময় তার নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশের প্রটোকলকে ডাকা হয়। পুলিশ প্রটোকলের গাড়ি সেখানে গেলে তাদের সরিয়ে দেয় খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে অবস্থানরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ভাইপোর বিয়ের অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে যেতে পারেননি বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। এর আগে শুক্রবার তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে এক ভিডিও বার্তায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমি উপস্থিত হতে না পারলেও সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নয়া পল্টনে সমাবেশে খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনের রাস্তা দুটি বালু বোঝাই ট্রাক দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। ট্রাকের একজন চালক জানান, গাবতলী থেকে ট্রাক দুটি বালু বোঝাই করে বনানীর একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে নেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পুলিশ তাদের গাবতলী থেকে বিরোধী নেতার বাসার সামনে নিয়ে আসে। তাদের বলা হয়েছে আগামীকাল পর্যন্ত গাড়িগুলো সেখানে থাকবে। মহিলা পুলিশ কেন আনা হয়েছে- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নুরুল আলম বলেন, বিরোধীদলের নেত্রীর অধিকতর নিরাপত্তার জন্যই সেখানে মহিলা পুলিশ রাখা হয়েছে। তবে খালেদার যাতায়াতের ক্ষেত্রে কোনো বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে না। ওদিকে বিরোধী নেতার প্রটোকল প্রত্যাহারের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাত ৮টা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে তার বাসভবনে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তাকে তার গুলশানের কার্যালয়ে যেতে দেয়া হচ্ছে না। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে তার বাসভবন ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। বাসার সামনে ট্রাক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক গাড়ি এলোপাতাড়ি করে রেখে রাস্তার দু পাশে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। মির্জা আলমগীর  বলেন, আমি সরকারের এহেন ন্যাক্কারজনক ও চরম ফ্যাঁসিবাদী আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি গভীর উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি, বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সরকার অবৈধ ও বেআইনিভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আমি অবিলম্বে বিরোধীদলীয় নেতার সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক  চলাফেরা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়িত্ব বহন করতে হবে। অবিলম্বে বিরোধী নেতার বাসভবনের সামনে থেকে ব্যারিকেডসহ অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সরিয়ে দেয়ার দাবিও জানান তিনি। এদিকে রাত সোয়া ১০টায় রুহুল আমিন গাজী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও ইলিয়াস খানসহ ৬ সাংবাদিক নেতা খালেদা জিয়ার বাসভবনে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।