হ্যান্ড অব গড গোল : মৃত্যুশয্যায়ও ক্ষমা চাইবো না : ম্যারাডোনা

মাথাভাঙ্গা মনিটর: সেই ঘটনার পর কেটে গেছে ৩০ বছর। কোটি কোটি বার দেখা হয়েছে সেই ভিডিও। তবুও সেই দৃশ্য আজও সবার চোখে অমলিন। এ নিয়ে ফের নতুন করে আলোচনায় নেমে পড়লেন খোদ দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার প্রথম গোল হাত দিয়ে ছিলো কি-না, এ নিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ খরচ করা হয়েছে। খোদ ম্যারাডোনা পরে স্বীকার করেছেন, হ্যাঁ, ওটা হাত দিয়েই গোল ছিলো। কিন্তু এতোদিন পর একটি বইয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, জীবনেও ওই কাজের জন্য ক্ষমা চাইবেন না। এমনকি, মৃত্যুশয্যায় শুয়েও নয়। ম্যারাডোনা লিখেছেন, ‘হাত দিয়ে গোল করার জন্য আমি দুঃখিত নই, একটুও দুঃখিত নই। তখনও ছিলাম না। তিরিশ বছর পরেও নয়। মৃত্যুশয্যায়ও ওই গোলের জন্য আমি ‘সরি’ বলবো না।’ কিন্তু ওই ঘটনার সময় মাঠে ঠিক কী হয়েছিল, সেটা এতদিন ছিলো অজানাই। ম্যারাডোনাও নিজে কোনোদিন এ নিয়ে কোনো আভাস দেননি। কিন্তু তার এই বইতে সেরকমই অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছে। ওই ঘটনার চার বছর আগেই ফকল্যান্ড যুদ্ধে ব্রিটেনের কাছে পরাস্ত হয়েছিলো আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফুটবলের যুদ্ধে ‘শত্রুকে’ হারানোর পর তার প্রতিশোধ নিয়ে দেশবাসীকে উপহার দিয়েছেন, এমনটাই মনে করেন ম্যারাডোনা।

মাঠের ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা করে তিনি লিখেছেন, ‘বলটা আমাদের কাছে একটা বেলুনের মতো ভেসে আসছিল। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম, এটাই আমার সুযোগ। তা গ্রহণ করতেই হবে। ফাউল ডাকলে ডাকুক, আমি গোল করবই।’ তারপর লিখেছেন, ‘আমি লাফিয়ে উঠলাম। (পিটার) শিলটন বোধহয় ভাবেনি যে, আমি এরকম করতে পারি। ও সরাসরি বলটার দিকে এগোচ্ছিলো। কিন্তু আমি এমনভাবে শরীরটাকে বাঁকিয়ে বলের কাছে পৌঁছে যাই যে ও বুঝতেই পারেনি। গোটা জীবনে আর একবারও ওরকম করতে পারিনি। শিলটনও লাফিয়েছিলো। কিন্তু ওর আগেই আমি বলের নাগাল পেয়ে যাই। ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলো।’ ‘মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি গোল সেলিব্রেট করার জন্য দৌড়াতে শুরু করি। আমি হাত দিয়েই বলটা মেরেছিলাম। কিন্তু সেটা এমনভাবে গোলে ঢুকেছিল যেন মনে হয়েছিল হাত দিয়ে নয়, পা দিয়ে বলটা মেরেছিলাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঘটনাটা কেউ ভালো করে সেদিন দেখতে পায়নি। না রেফারি, না লাইন্সম্যান, না শিলটন। কিন্তু একজনই ব্যাপারটা বুঝতে পারে, আমাদের সতীর্থ ফেনউইক। আমার পাশেই দাঁড়িয়েছিল ও। কিন্তু ও ছাড়া আশপাশে কেউ ছিলো না।’ ম্যারাডোনা জানিয়েছেন, কেউ যাতে প্রতিবাদ না করতে পারে, তাই গোলের পরেই তিনি দৌড়াতে শুরু করেন। সতীর্থ বাতিস্তা এসে পাশে বলেন, ‘দিয়েগো, তুমি হাত দিয়ে গোলটা করলে, তাই না?’ ম্যারাডোনা বলেন, ‘যেতে দাও। সেলিব্রেট করতে থাকো যাতে ওরা বুঝতে না পারে।’ এ সিদ্ধান্তের পেছনে কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন ম্যারাডোনা। লিখছেন, ‘আমাদের ভয় ছিলো যে গোলটা হয়তো বাতিল করে দেয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি।’ তবে মাঠের অনেকের পাশাপাশি ম্যারাডোনার কাণ্ড ধরতে পেরেছিলেন মাঠে উপস্থিত সাংবাদিকরা। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে তার উদ্দেশে একের পর এক প্রশ্ন ভেসে আসে, যার মোদ্দা ব্যাপারটা ছিলো, ম্যারাডোনা কি সত্যিই হাত দিয়ে গোল করেছেন?

ম্যারাডোনা এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘ঘটনাটা কী করে বর্ণনা করবো সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই শুরু থেকেই বলছিলাম, আমি হেডেই গোল করেছি। কেন জানি না, ভয় পেয়েছিলাম। কারণ তখনও আমরা স্টেডিয়ামে। যদি গোলটা তখন বাতিল করে দিতো! কিন্তু সেদিনই পরে একজনকে বলেছিলাম, ‘ওটা হচ্ছে ম্যারাডোনার হ্যান্ড অফ গড’ গোল। একটা পত্রিকা সেই কথাটা ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচার পেয়ে যায়।’