মেসি ম্যাজিকের অপেক্ষা

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বিশ্বেরঅন্যতম সেরা ফুটবলার মেসি। ক্লাব ফুটবলে গোলের নতুন রেকর্ড গড়েপ্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার দক্ষতাটা ভালোই অর্জন করেছেন। জয় করেছেন ফুটবলদুনিয়ার কোটি কোটি অনুরাগীর হৃদয়। কিন্তু জাতীয় দলের আকাশী নীল জার্সিগায়ে ক্লাব ফুটবলের জাদুটা দেখাতে পারছিলেন না। ক্লাবে যতোটা ধারালো তিনি, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ততোটা না। এমন অনুযোগের তীর বার্সেলোনার এফরোয়ার্ডের ওপর। কিন্তু সেই তীর ভোঁতা করে দিয়ে ব্রাজিল বিশ্বকাপে জ্বলেউঠছেন লিওনেল মেসি। প্রতিপক্ষের জালে দেয়া দলের ৬ গোলের ৪টি-ই মেসিরএকাউন্টে জমা। সমালোচকদের জবাব দিয়েছেন এ ফুটবলার। সব রেকর্ড অর্জনের পরসেরা সময়ের সেরা তারকার সামনে বিশ্বকাপ জয়ের গুরু দায়িত্ব পড়েছে। সেই বাঁধাপেরোতে ষোল দলের লড়াইয়ের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে আজ সুইজারল্যান্ডেরমুখোমুখি হচ্ছে মেসির দল আর্জেন্টিনা।

বলতে দ্বিধা নেই একটার পরএকটা ম্যাচ যাচ্ছে, আর মেসির ওপর যেন প্রত্যাশার চাপটাও বাড়ছে।আর্জেন্টাইনরা বলছেন, আমাদের অনেক ধনী লোক সুইস ব্যাংকে টাকা রাখেন। আজআমাদের মেসি, ডি মারিয়া, হিগুয়েনরা সুইস ব্যাংকের গোল পোষ্টে বল রাখবেন।এমন কথা সুইস ফুটবলারদের কানে গেছে। ওরা নিশ্চুপ থাকলেও সুইস সমর্থকরাবলছেন, সুইস ব্যাংকের গোল পোষ্টে মেসির বাঁ পায়ের শট রাখতে হলে অনেক শর্তপূরণ করতে হবে। নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে আসতে হবে। সেটা হতে দেবেন নাডিফেন্ডার ফিলিপ সান্ড্রোজ, রিকোর্ডো রডরিগুয়েজ, জেরদান শাকিরি, ফাবিয়াশায়ার, ষ্টিভ বারগেন, ষ্টিফেন, মাইকেলরা। সুইস ব্যাংকের মাঠে এবারআর্জেন্টিনার চেক বাউন্স হয়ে যাবে। তারা বলছেন, মাঠে আসুন সেখানেই আমাদেরপ্লেয়াররা জবাব দেবে। ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেই হয় কারণ স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলগুলো যেখানে বিদায় নিয়েছে।সেখানে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা একটা দলের কথা তো আপনাকে শুনতেই হবে।

গতবিশ্বকাপে স্পেনকে হারিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিলো সুইজারল্যান্ড। আর এবারেরবিশ্বকাপের বাছাইয়ে সুইসরা ১০ ম্যাচ খেলে একটিতেও হারেনি। পরিসংখ্যানটামিলিয়ে দেখলে সুইসদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধাটা বেড়ে যেতে পারে। সাও পাওলোরলড়াইটা হবে শুধু ফুটবল মাঠেরই না। আমেরিকা-ইউরোপ মহাদেশের মধ্যেও বটে। গতআসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া দক্ষিণ আমেরিকার লা আলবিসেলেস্তেরাচায় আরেকটা সাফল্য ফিরিয়ে আনতে। অন্তত মেসিরাই যেন সেটা করতে পারে।ৱ্যাঙ্কিঙে দু দলের অবস্থান পাশাপাশি ৫ ও ৬। লড়াইটা যে শেয়ানে শেয়ানে হবেতা বোঝা যায়।

পরিসংখ্যান অবশ্য তা বলে না। দু দলের ছয়বারেরদেখায় একবারও জিততে পারেনি সুইসরা। ৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের তিনটিতে হার, দুটিতে ড্র। তাদের মধ্যে একবারই বিশ্বকাপে সাক্ষাত হয়েছিলো। ১৯৬৬ ইংল্যান্ডবিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারিয়েছিলোসুইজারল্যান্ডকে। সুইজারল্যান্ড কী পারবে ৬৬’র সেই প্রতিশোধ নিতে?

১৯৭৮সালে ঘরের মাঠে আর ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরআর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ অর্জন বলতে ৯০ এর ইতালি বিশ্বকাপে রানার্সআপ।দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপের গত আসরে কোয়ার্টার ফাইনালের গেরো পার হতেপারেনি দলটি। সেই আক্ষেপটা নিয়ে ম্যারাডোনার দেশ আটঘাট বেঁধেই ব্রাজিলেএসেছে শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে।প্রতিপক্ষকে সহজে ছাড় দেবে নাআলেসান্দ্রো সাবেলার শিষ্যরা, এমন মন্ত্রই কানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমরাউন্ডে বসনিয়া হার্জেগোভিনাকে ২-১, ইরানকে ১-০, নাইজেরিয়াকে ৩-২ গোলেহারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই নকআউট পর্বে উঠেছে মেসিরা। পূর্ণ ৯ পয়েন্টপেলেও বাস্তবতা হচ্ছে মেসিদের খেলায় সমর্থকদের মন ভরেনি। ইরানের সঙ্গেম্যাচে ইনজুরি সময় মেসির গোলটি মান বাঁচিয়েছে। রেফারি তো ইরানকে পেনাল্টিবঞ্চিত করেছেনই।তারপরও ম্যাচে ইরানের ভাগ্য ফেভার করলে ব্রাজিলেইরানী উত্সব হতো। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে মেসির জোড়া গোল দেখা গেছে শুধু।হিগুয়েইন, আগুয়েরো, ডি মারিয়ার সেই নৈপুণ্য চোখে পড়েনি। এক নাইজেরিয়ানতরুণ ফরোয়ার্ড আহমাদ মুসাকে আটকাতেই তারা ব্যর্থ হয়েছেন, ডিফেন্ডারদেরব্যর্থতায়। এমন অবস্থা সুইসদের সাথে হলে দুঃখ বরণ করতে হতে পারেআর্জেন্টাইনদের। ডিফেন্স নিয়ে ভাবতে হবে সাবেলাকে।

অন্যদিকে দুঃখকেসঙ্গী করে ব্রাজিলে পা দিয়েছেন কোচ ওতমার হিজফিল্ডের শিষ্যরা। কারণ ৫৪বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার পর আর সেই পর্বে যেতে পারেনি সুইসরা।এবার যদি সে সুযোগ আসে! বাঁধা শুধু আর্জেন্টিনা নামের একটা পর্বত।সুইসরা২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি। একটি গোলওখায়নি সেবার। তারপরও টাইব্রেকারে গিয়ে বাদ পড়েছিলো সুইজারল্যান্ড। এবারগ্রুপপর্বে সুইজারল্যান্ড ২-৫ গোলে ফ্রান্সের কাছে হেরে গেলেও পরের দুম্যাচে ইকুয়েডরকে ২-১ ও হন্ডুরাসকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপরানার্সআপ হয়ে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। যে কারণে অধিনায়ক গোখানইনলারদের আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেছে। তাই তো প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে এসেপ্রশংসার মোড়কে জড়াতে চান না খেলোয়াড়রা। আর্জেন্টিনার সাথে হাইভোল্টেজম্যাচ হবে। তাই কোচ ওতমার হিজফিল্ড তার ছেলেদের হাসিমুখে রাখার পাশাপাশিমেডিক্যাল চেকআপ করিয়েছেন। সবাই শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ আছেন কিনাতার রিপোর্ট নিয়েও কোচিং ষ্টাফ এবং মেডিক্যাল ষ্টাফদের সাথে বসেছিলেন।

দলেরঅধিনায়ক গোখান বলেছেন, ‘আমরা জানি আর্জেন্টিনা অনেক বড় দল। আর্জেন্টিনারমতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে হলে শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিকশক্তিটাও একটা বড় টনিক। আমরা জানি সাও পাওলোর এরিনা কোরিনন্থিয়ান্সের মাঠআর্জেন্টিনার হোম গ্রাউন্ড নয়। তারপরও বুঝতে হবে সেখানে পাশে সুইস সমর্থকছাড়াও ব্রাজিলিয়ানরা থাকবেন। মাঠে নেমে আমরা প্রতিপক্ষকে খাটো করে দেখতেচাই না। আমাদের কাজ হচ্ছে গোল করা।

সুইসদের জন্য প্রতিপক্ষেরত্রাস জারদান শাকিরি বলেছেন, ‘আমাকে বাধা দেয়ার জন্য পাবলো, জাবালেটা, নাকি গ্যারি থাকবেন, আমি সেটা ভাবতে চাই না। যেভাবে খেলে এসেছি। টিম ওয়ার্কনিয়ে ম্যাচ জিতেছি, সেটাই করে যেতে চাই।এদিকে আর্জেন্টিনাসমর্থকদের জন্য একটি দুঃসংবাদ আছে। বাঁ পায়ের মাসলে চোট লাগায় সার্জিওআগুয়েরো খেলতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে ম্যাচেব্যথা পাওয়ায় তাকে আগেই মাঠ থেকে উঠিয়ে নিতে হয়েছিলো। তার চিকিত্সক ডা.ড্যানিয়েল মার্টিনেজ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আরো কয়েকদিন তাকে বিশ্রামেথাকতে হবে। আগুয়েরো দলে না থাকলে চাপটা পড়বে মেসির ওপর। যদিও তারপরিবর্তে লাভেজ্জি বা রডরিগো পালাসিওকে নামানো হতে পারে।