ভারতের বোলারদের পিটিয়ে সিডনির নিয়ন্ত্রণ অস্ট্রেলিয়ার

মাথাভাঙ্গা মনিটর: এরই মধ্যে সিরিজ হেরে বসা ভারতের শেষ টেস্ট জিতে কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়ার পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে বোলারদের ব্যর্থতায়। সিডনি টেস্টে চতুর্থ দিন তাদের ইচ্ছেমতো পিটিয়ে ৩৪৮ রানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্ষত-বিক্ষত পিচে শেষ দিন স্বাগতিকরা আর ব্যাট করতে না নামলেও ম্যাচ বাঁচানো কঠিন হবে ভারতের জন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ২৫১ রান। ওয়ানডের মতো ব্যাটিং করে মাত্র ৪০ ওভারে এই রান তোলে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৭২ রানের জবাবে শুক্রবার ৪৭৫ রান করে আউট হয়ে গেলেও আশা টিকে ছিলো ভারতের। কিন্তু চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ম্যাচের চিত্র পুরো পাল্টে দেয় স্বাগতিক দল। ভারতের পেসারদের ওপর চড়াও হয়ে রান দ্রুত বাড়িয়ে নিয়েছেন ক্রিস রজার্স, স্টিভেন স্মিথ আর জো বার্নস। শেষ দিকে তো টি-টোয়েন্টির মতো ব্যাট চালানো শুরু করেন বার্নস। দিনের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৩৯ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৬ রান করেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
ভুবনেশ্বর কুমারের বলে আউট হওয়ার আগে ৫৬ রান করেন রজার্স। ৭৭ বলের ইনিংসে ৭টি চার মারেন তিনি। এর সাথে টানা ৬ ইনিংসে অর্ধশতক করে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড বইয়ে নিজের নাম লেখালেন এ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। মার্ক টেইলর, অ্যালান বোর্ডারসহ অস্ট্রেলিয়ার আরও আটজনের এ কীর্তি আছে।
দিনের শেষ দিকে দ্রুত রান তোলা শুরু করেন দারুণ ফর্মে থাকা অধিনায়ক স্মিথ। ৭০ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭১ রান করেন তিনি। সিরিজে তার রান হলো ৭৬৯। চার বা এর চেয়ে কম ম্যাচের সিরিজে এটাই কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ। আর কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানকে ছাড়িয়ে স্মিথই এখন ভারতের বিপক্ষে কোনো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩০ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত আছেন ব্র্যাড হ্যাডিন। ভারতের কোনো বোলারই অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি কমাতে পারেননি। উমেশ যাদব তো ৩ ওভারে দিয়েছেন ৪৫ রান। রবিচন্দ্রন অশ্বিন চার উইকেট নিলেও ১৯ ওভারে দিয়েছেন ১০৫ রান।
সকালে ৫ উইকেটে ৩৪২ রান নিয়ে খেলতে নেমে দিনের শুরুতেই অধিনায়ককে হারায় ভারত। আগের দিনের ১৪০ রানের সাথে আর ৭ রান যোগ করতে পারেন বিরাট কোহলি। তার ২৩০ বলের ইনিংসে ছিলো ২০টি চার। শেষ দিনের লড়াইয়ে প্রায় অসাধ্য সাধনের স্বপ্নে ভারত বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেতে পারে তাদের লোয়ার্ড-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সাফল্যে। দিনের পঞ্চম ওভারে কোহলি ফিরে গেলেও অশ্বিন-ভুবনেশ্বর কুমারদের দৃঢ়তায় পাঁচশর কাছাকাছি স্কোর গড়ে তারা। অশ্বিন ১১১ বল খেলে ৬টি চারের সাহায্যে ৫০ রান করেন। আর ভুবনেশ্বর করেন ৩০ রান। অস্ট্রেলিয়ার মিচের স্ট্যার্ক নেন ৩ উইকেট। রায়ান হ্যারিস, ন্যাথান লায়ন ও শেন ওয়াটসন নেন দুটি করে উইকেট। সিডনির এ উইকেটে ইতোমধ্যে বল অনেক ঘুরতে শুরু করেছে; শেষ দিনে আছে বৃষ্টির আশঙ্কাও। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া আর ব্যাট করতে না নামলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর জিততে হলে এই মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড গড়তে হবে ভারতকে। ৯ বছর আগে এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৮৮ রান করে জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে আগেই চার টেস্টের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে অস্ট্রেলিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ৫৭২/৭ ইনিংস ঘোষণা (রজার্স ৯৫, ওয়ার্নার ১০১, ওয়াটসন ৮১, স্মিথ ১১৭, মার্শ ৭৩, বার্নস ৫৮, হ্যাডিন ৯*, হ্যারিস ২৫; সামি ৫/১১২, যাদব ১/১৩৭, অশ্বিন ১/১৪২) দ্বিতীয় ইনিংস: ২৫১/৬ (রজার্স ৫৬, ওয়ার্নার ৪, ওয়াটসন ১৬, স্মিথ ৭১, মার্শ ১, বার্নস ৬৬, হ্যাডিন ৩১*, হ্যারিস ০*; অশ্বিন ৪/১০৫, সামি ১/৩৩, ভুবনেশ্বর ১/৪৬।
ভারত প্রথম ইনিংস: ৪৭৫ (বিজয় ০, রাহুল ১১০, রোহিত ৫৩, কোহলি ১৪৭, রাহানে ১৩, রায়না ০, ঋদ্ধিমান ৩৫, অশ্বিন ৫০, ভুবনেশ্বর ৩০, সামি ১৬*, যাদব ৪; স্ট্যার্ক ৩/১০৬, ওয়াটসন ২/৫৮, হ্যারিস ৪/৯৬, লায়ন ২/১২৩)।