ফাইনালে চোখ বাংলাদেশের

আবেগের পাহাড় কাঁধে আজ মাঠে নামছে টাইগাররা : প্রতিপক্ষ ভারত

স্টাফ রিপোর্টার: আইসিসির বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল বাংলাদেশ, সেই স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ার ঘোর এখনো কাটেনি। তবে এরই মধ্যে টাইগারদের স্বপ্নের পরিধি সম্প্রসারিত আরও। সেমিফাইনালে যখন ওঠা গেছে, ফাইনালে কেন নয়? গোটা শিবিরে এখন এই ভাবনায় বুদ হয়ে আছে। কিন্তু বর্ধিত সেই স্বপ্নপূরণের পথে বাধার দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে পরাক্রমশালী ভারত। সম্প্রতি সময়ে আইসিসির টুর্নামেন্টে এই দলটির মুখোমুখি হওয়া মানেই টাইগারদের জন্য বরাদ্দ রাশিরাশি হতাশা। ইতিহাস গড়ে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই কোয়ার্টার ফাইনালের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা টাইগার সমর্থকরা কখনো ভুলতে পারবেন কিনা সন্দেহ। ওই ম্যাচের পর যতবার ভারত-বাংলাদেশ লড়াই হয়েছে, সেটা পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। ময়দানে থেকেছে বাড়তি ঝাঁজ। এরপর গত বছর ভারতে টি-২০ বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্যভাবে স্বাগতিকদের কাছে এক রানে হেরে যাওয়া, এখনো টাইগার সমর্থকদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে যায়। এজবাস্টনে এবার যখন আরও বড় মঞ্চে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত, ওই দুঃস্মৃতিগুলো ফিরে আসছেই। টাইগারদের জন্য সেটা আসছে আত্মবিশ্বাসের রসদ হয়ে। ক্রিকেটের বৈশ্বিক আসরগুলোতে ভারত সব সময়ই ফেভারিট। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়েই বিরাট কোহলির দল আরেকবার পা ফেলেছে ইংল্যান্ডে। সেই লক্ষ্যে দারুণভাবেই এগোচ্ছে তারা। এজবাস্টনে আজকের ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট দলটি। সেই হিসেবে অনেকই টিম ইন্ডিয়াকে ১৮ জুন ওভালের ফাইনালে দেখে ফেলেছেন। কিন্তু ক্রিকেটে কি সব সময় সবকিছু নিয়ম মেনে হয়? সেখানে লড়াইয়ে সর্বদা বড় দল জিতবে, এমনটা তো বলা মুশকিল। উদাহরণ আছে হাতের সামনেই, এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই তো খর্বশক্তির শ্রীলংকার কাছে হেরেছে ভারত। তাছাড়া ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কিন্তু ছোট-বড়োর তফাৎ তেমন একটা দেখায় না। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিত ওই হারের পর নিজেদের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। তিনবার টি২০তে, একবার টেস্টে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন পর আবার যখন দুই দল ৫০ ওভারের ম্যাচে মুখোমুখি; শেষ চার ম্যাচের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশ-ভারত ময়দানে নামছে ২-২ সমতা নিয়ে। তাই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে না ভারত, সেটা আসর শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে নিজের তিনশোর্ধ্ব পুঁজি গড়ে মাশরাফির দলকে মাত্র ৮৪ রানে অলআউট করে দেয়ার পরও। কারণ, ওটা যে নিছকই একটা প্রস্তুতি ম্যাচ ছিল, মূল লড়াইয়ে টাইগাররা সেটা খুব ভালোভাবেই দেখিয়ে দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে হারলেও তারা গড়েছে তিনশোর্ধ্ব পুঁজি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের ২৬৫ রান তাড়া করে জিতেছে টাইগাররা। মোদ্দাকথা নিজেদের সেরাটা দিয়েই তারা উঠেছে সেমিতে।
সেই সেমিতে প্রতিপক্ষের নাম যখন ভারত, তখন অহেতুক বাড়তি একটা চাপ টাইগারদের ওপর এসেই যায়। ভারতের সঙ্গে ওই চাপটাও আজ বড় প্রতিপক্ষ মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের। ম্যাচটা আবার সেমিফাইনাল। এমন ম্যাচে নিজেদের আবেগ আর স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কিনা টাইগাররা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তবে ম্যাচটাকে অন্য দশটা ম্যাচের মতো দেখে যতটা সম্ভব নির্ভার থাকারই চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই টাইগারদের কানে জপে দিচ্ছে একটাই মন্ত্র, ‘নির্ভার থাক, নিজেদের সেরাটা দাও’। তাহলেই হয়ে যাবে! নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে এই বাংলাদেশ যেকোনো দলকেই হারাতে পারে, এই সত্য ক্রিকেটবিশ্ব এখন বেশ ভালো করেই জানে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই টাইগাররা দেখিয়েছে, তারা কি করতে পারে। ১২ রানে ৩টি আর ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েও তারা কিউইদের ২৬৫ রান পেরিয়ে গেছে হেসে-খেলে। এখন যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে জানে এই বাংলাদেশ। গোটা দল বেশ আত্মবিশ্বাসী। ক্রিকেটারদের চলন-বলনেও আত্মবিশ্বাসের ছটা। অনুশীলনেও থাকছে বাড়তি কিছু দেয়ার চেষ্টা। বাড়তি কিছুর চেষ্টায় থাকতেই হচ্ছে, বিশেষ করে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। পরিস্থিতি যা বলছে, তাতে এজবাস্টনের উইকেট হবে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ। সেখানে তারকাসমৃদ্ধ ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা টাইগার বোলারদের কঠিন পরীক্ষা নেবে, সেটা আর বলার কি আছে? কোহলির দল বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিলে ব্যাটসম্যানদেরই স্বপ্নপূরণের কাজটা সারতে হবে। কিন্তু এই ভেন্যুতে খেলা হয়নি বাংলাদেশের। গ্রুপপর্বে টাইগারদের দুটো ম্যাচ ছিল ওভালে, অন্যটি কার্ডিফে। এদিক থেকে ভারত কিছুটা এগিয়ে। গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি তারা খেলেছে এই ভেন্যুতেই। সেই ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছিল কোহলির দল। টাইগারদের বোলিং ভা-ারে অবশ্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেয়ার মতো অস্ত্র রয়েছে। উইকেট যেমনই হোক, নিউজিল্যান্ড ম্যাচের মতো আজও চার পেসার নিয়েই মাঠে নামার পরিকল্পনা বাংলাদেশের। সেখানে বড় ভরসা মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে খেলা এই পেস বিস্ময়ের ঝুলিতে আছে ১৩টি উইকেট! সাম্প্রতিক সময়টা ভালো না গেলেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার দিকটা ভালোই জানা তার। ভালোভাবে জানেন দলপতি মাশরাফিও। ভারতের বিপক্ষে তারও তো উজ্জ্বল অতীত রয়েছে। গতিঝড় তোলার জন্য প্রস্তুত তাসকিন আহমেদ আর রুবেল হোসেন। তাদের সঙ্গে বোলিংয়ে মাশরাফির তুরুপের তাস মুস্তাফিজ। ব্যাটিংয়ে সেটা নিশ্চিত করেই তামিম ইকবাল। অতীতে ওপেনারও যথেষ্ট ভুগিয়েছেন ভারতকে। এবার রয়েছেন দারুণ ছন্দে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানো এই বাঁহাতি পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করেছিলেন ৯৫ রান। শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য কিছু করতে পারেননি। সেটা ভারত ম্যাচের জন্যই জমিয়ে রেখেছেন কিনা, কে জানে! যদি জমিয়ে রাখা পারফরম্যান্সটা দেখিয়ে দিতে পারেন তামিম, বোলাররাও ঢেলে দেন নিজেদের সেরাটা; টাইগারদের স্বপ্নের ফাইনালের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, ভারতের সেই সাধ্য কোথায়? কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেমন বলে রেখেছেন, ‘অনেক মানুষই ভাবতে পারেনি আমরা সেমিফাইনালে উঠতে পারব। আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, যেকোনো দলকেই হারাতে পারি। টাইগারদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ দেখার অপেক্ষাতেই ক্রিকেটপ্রেমীরা।