নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে এ রায় প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত রায়টি ৬৪ পৃষ্ঠার। গত ১১ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের ডিভিশন বেঞ্চ মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর নয়টি ধারা এবং এর সংশ্লিষ্ট উপধারাগুলোও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লংঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর আঘাত করেছে। এটি ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতিরও পরিপন্থি। রায়ে বলা হয়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্মকমিশনের সব সদস্যরা প্রশাসনিক নির্বাহী। একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারে না। কেননা মাসদার হোসেন মামলায় রায়ে এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। এছাড়া এর সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো ‘কালারেবল প্রবিশন’। এটি সরাসরি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের চেতনার পরিপন্থি।

প্রসঙ্গত: হাইকোর্টের এই রায় ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই দিন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ-টু-আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। রায়ে বলা হয়, মোবাইল কোর্ট আইনের ধারা ৫, ৬ (১,২,৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০,১১, ১৩ ও ১৫ ধারা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং ধারাগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে (নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ) ক্ষমতার পৃথকীকরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের দুটি মৌলিক কাঠামোর বিরোধী। ২০১১ সালের ১১ অক্টোবর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খান প্রথমে মোবাইল কোর্টের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত একটি বহুতল ভবনের মালিক মো. মজিবুর রহমান একই বছরের ১১ ডিসেম্বর আরেকটি রিট করেন। মোবাইল কোর্ট তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়। আইনের বৈধতা এবং অর্থ ফেরতের দাবিতে তিনি এই রিটটি করেন। ২০১২ সালে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন অপর রিটটি করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। তিনটি রিট আবেদনের ওপরই হাইকোর্ট সরকারের উপর রুল জারি করে এ রায় দেয় হাইকোর্ট।