টেন্ডুলকারকে রোহিত ও সামির উপহার

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বিদায়ী সিরিজে শচীন টেন্ডুলকারকে দারুণ এক জয় উপহার দিলেন দুই অভিষিক্ত রোহিত শর্মা ও মোহাম্মদ সামি। দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিং-বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দুই দিন হাতে রেখেই জয় এনে দিয়েছে ভারতকে। কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে স্বাগতিক দলের জয়ের ব্যবধান এক ইনিংস ও ৫১ রান। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন শেষেও অনেকে ভাবতে পারেনি টেন্ডুলকারের ১৯৯তম টেস্ট এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। গতকাল শুক্রবারের ইডেন বরং অপেক্ষায় ছিল ৯২ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের শতকের জন্য।
দর্শকদের বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখেননি অফস্পিনের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে যাওয়া অশ্বিন। দিনের চতুর্থ ওভারেই দ্বিতীয় টেস্ট শতকে পৌঁছে যান তিনি। আগের দিন অবিচ্ছিন্ন ১৯৮ রানের জুটি গড়া রোহিত ও অশ্বিন গতকাল শুক্রবারও কম হতাশ করেননি ক্যারিবীয় বোলারদের। দুজনের দৃঢ়তায় প্রথম পানি-পানের বিরতি পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেয় ৬ উইকেটে ৩৫৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত।
অন্যদের ব্যর্থতায় বীরাসামি পারমলের হাতে বল তুলে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। আর প্রথম বলেই এই বাঁহাতি স্পিনার সাফল্যে উদ্ভাসিত। অফস্টাম্পের বাইরে পিচ পড়া বলটা প্যাড দিয়ে খেলেন রোহিত। তবে বীরাসামির আবেদনে আঙুল তুলতে দ্বিধা করেননি আম্পায়ার রিচার্ড কেটলবরো। যদিও টিভি রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে বলটা অফস্টাম্পে নাও লাগতে পারতো। অভিষেকে আলো ছড়িয়ে ১৭৭ রান করে, দর্শকদের তুমুল করতালির মধ্যে ফিরে আসেন রোহিত। তার ৩০১ বলের চমৎকার ইনিংসটি ২৩টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো। সপ্তম উইকেট জুটিতে রোহিত ও অশ্বিনের অবদান ২৮০ রান। সপ্তম উইকেটে ভারতের পক্ষে এটা সর্বোচ্চ এবং সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি। রোহিতের বিদায়ের পর অশ্বিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিন ওভার পরই শেন শিলিংফোর্ডের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১২৪ রান করা অশ্বিনের ২১০ বলের ইনিংসে ১১টি চার। তার প্রথম শতকটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
অশ্বিনের বিদায়ের পর ৯ রান যোগ করে ৪৫৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। ৬ উইকেট নিলেও সেজন্য অফস্পিনার শিলিংফোর্ডের খরচ ১৬৭ রান। ২১৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঝড়ো সূচনা এনে দেন ক্রিস গেইল। মাত্র ৩৪ বলে ৭টি চারে ৩৩ রানে পৌঁছে যান এ আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান।
কিন্তু মুখোমুখি হওয়া ৩৫তম বলে গেইল আউট। ভুবনেশ্বর কুমারকে পয়েন্টের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে বিরাট কোহলির হাতে ধরা পড়েন তিনি। উদ্বোধনী জুটির পুরোটা অর্থাৎ ৩৩ রানই আসে গেইলের ব্যাট থেকে। ৩১তম বলে প্রথম রানের দেখা পাওয়া কাইরন পাওয়েল এরপর ড্যারেন ব্রাভোকে সাথে নিয়ে দলকে নিয়ে যান ১শর ওপরে। পাওয়েলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ৬৮ রানের জুটিটা ভাঙ্গেন অশ্বিন। এরপরই শুরু পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেটার সামির জাদু। একে-একে মারলন স্যামুয়েলস, দীনেশ রামদিন, স্যামি, শিলিংফোর্ড ও শেলডন কট্রেলকে ফিরিয়ে অভিষেকেই ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন এ ডানহাতি পেসার।
১ উইকেটে ১০১ রানের স্বস্তিকর জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্যারিবীয়রা ১৬৮ রানে অলআউট হয়ে যায় সামির তোপে। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেয়া সামির এ ম্যাচে ১১৮ রানের বিনিময়ে শিকার ৯টি। অভিষেকে ভারতের পক্ষে এটা দ্বিতীয় সেরা বোলিং। সেরা বোলিং ১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে লেগস্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানির ১৩৬ রানে ১৬ উইকেট। অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও সেটাই। সবাই এখন তাকিয়ে ১৪ নভেম্বরের দিকে। সেদিন মুম্বাইয়ে শুরু হবে টেন্ডুলকারের শেষ টেস্ট। সংক্ষিপ্ত স্কোর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৩৪ ও ১৬৮, ভারত: ৪৫৩, রোহিত ১৭৭, অশ্বিন ১২৪, ম্যাচ সেরা: রোহিত শর্মা।