চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড়ে বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের প্রীতি ফুটবল

বল নিয়ে আছাড় : দর্শকসারিতে অট্টহাসি করতালি

 

আলম আশরাফ: আয়োজনটা চমৎকার। পরিবেশটাও দারুণ। বিবাহিত বনাম অবিবাহিত। প্রীতি ফুটবলের উপহার? তাও শিল বা কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, খাসি আর ভেড়া। মাঠের চতুর্দিকেই উপচে পড়া নারী-পুরুষ দর্শকের ভিড়। খেলা শুরুর বাঁশিতে ফু দিলেন রেফারি বেলাল হোসেন। সমর্থকদের কোনো পক্ষেরই বাড়তি প্রস্তুতিতে কম ছিলো না, ঢোল আর করতালির মধ্যদিয়ে খেলা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছুলো টান টান উত্তেজনায়।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় বাদালপাড়ার মাঠের উত্তেজনাপূর্ণ খেলা দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা। হাঁস-মুরগি ঘরে তোলার তাড়া নিয়েই ফিরছিলেন মধ্যবয়সী কয়েক নারীদর্শক। একজন নিঃশ্বাসটা বুক ভরে নিয়ে বললেন, বাব্বা, কতোদিন এরকম করে হাসিনি। হাসবো কী দেখে? অপরজন বলেন, সত্যিই তো, এরকম খেলা মাঝে মাঝে হলে বুকের গুমোট ভাবটা কেটে যায়। এ খেলার আয়োজন কে করলেন? কাদের উদ্যোগে বৃষ্টি ভেজা মাঠে অতো সুন্দর ফুটবল খেলা?

দৌলাতদিয়াড় ব্রিজ মোড় যুব সংঘের আয়োজন। মূল উদ্যোক্তা অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক সমাজকর্মী হাফিজুর রহমান লাল্টু। সাথে পেয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুলকে। সহযোগিতায়? কে নেই! সকলেই। তা না হলে দৈনিক মাথাভাঙ্গা সম্পাদক সরদার আল আমিন সেখানে কেন? সত্যিই তো। তিনি যে গ্রামেরই সন্তান। ফুটবল নিয়ে দৌঁড়াতে গিয়ে যখন একের পর এক খেলোয়াড়কে আছড়ে পড়তে হয়েছে কাদার মধ্যে, তখন অবশ্য খেলার মাঠের যে কতোটা প্রয়োজন তা উচ্চারিত হতে থাকে দর্শক সারিতে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শাহীন মোল্লা, সাইদুর রহমান, ইলিয়াস হোসেনসহ প্রায় সকলের মুখ থেকেই। খেলার মাঠ এখন করতে হলে কতো টাকা লাগবে? পতিত জমিও এখন লাখ টাকা কাঠা। তা নিয়ে যদি মাঠ করতে হয় তা হলে কোটি টাকায় তড়া পাবে না। তা হলে উপায়? আর কী কোনো দিন গ্রামে খেলার মাঠ হবে না? প্রজন্ম প্রবীনদের কাঠগড়ায় নিয়ে শুধু দোষারোপই করবে। বলবে, সব গিলে নিয়েছো। রাখানো কিছুই।

খেলা চলছে, দর্শক সারিতে মাঝে মাঝে বাজানো হচ্ছে ঢোল। যখন বল যাদের কাছে তখনই তাদের সমর্থকরা করতালি দিয়ে উৎসাহ যোগিয়েছে। প্রথমার্ধ ১-১ গোলে সমতা থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধটা আরো প্রতিযোগিতা পূর্ণ হয়ে ওঠে। গোল হচ্ছেই না, কোনো পক্ষেই পাচ্ছে না গোলের দেখা। উদ্যোক্তার আহ্বানে ব্যবসায়ী ইলিয়াসের তরফে যখন যারা আগে গোল করতে পারবে তাদের ১১শ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হলো, তখন যেন নতুন করে বল পেলো গতি। অবিবাহিতরা বিবাহিতদের দিলো গোল। কিছুক্ষণ পর পাল্টা আক্রমণ। গোল। তা নিয়ে বাধলো বিরোধ। রেফারি সামলাতে দু দুবার হলুদ কার্ড দেখালেন। হলো না। অবশ্য উদ্যোক্তাদেরই বিশেষ উদ্যোগে ফের মাঠে গড়ালো বল। তখন ২-২ সমতা। নৈপূন্যতা প্রদর্শনে অবিবাহিতরাই ছিলো এগিয়ে। শেষ বাজি বাজলেও রেফারি আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদালাপী অ্যাড. বেলাল হোসেন পেলেন না ছুটি। লাইসম্যান দুজনও ততোক্ষণে কাদা মেখে কাবু। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খেলা গড়ালো টাইব্রেকারে। ততোক্ষণে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা তারা চোখ মেলে দেখলো খেলা। ফলাফল? বিবাহিতরা ৩-২ গোলে হাসলো বিজয়ের হাসি। বিজয়ীরা ঢোল নিয়ে রাস্তায় বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠলো, ছড়ালো রং। অবশেষে রাতে যুব সংঘের আয়োজেনে নৈশভোজপূর্বে উভয় দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আক্তাউর রহমান মুকুল। আয়োজনকে পূর্ণতা দিতে আরো যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা হলেন আসান, লিপু, মুন্না, সোহান, শাকিল, রানি, রানা ও আবীর। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চেয়ারম্যান মুকুল বললেন, জয় পরাজয় তো থাকবেই। বিনোদন দিতে পারাটাই ছিলো আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।

আয়োজকদের পক্ষে উদ্যোক্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাফিজুর রহমান লাল্টু সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, সকলের এরকম সহযোগিতা থাকলে মাঝে মাঝেই বিনোদনমূলক আয়োজনে যুব সংঘের আন্তরিকতায় কমতি থাকবে না।