এবার আর হলো না বাংলাদেশের

Afghanistan's Mohammad Nabi plays a shot during the second one-day international cricket match against Bangladesh in Dhaka, Bangladesh, Wednesday, Sept. 28, 2016. (AP Photo/A.M. Ahad)

স্টাফ রিপোর্টার: ওয়ানডেতে ১০০তম জয়। এমন উপলক্ষকে সামনে রেখে একটু-আধটু আয়োজনের ইচ্ছে থাকলেও সে সুযোগ আর হলো না বাংলাদেশের। শততম জয়টি আজকের জন্য ধরাছোঁয়ার বাইরেই রইল বাংলাদেশের। ওয়ানডে অভিষেকেই মোসাদ্দেক হোসেনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পরও হেরে গেল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২ উইকেটে হারিয়ে সমতা ফেরাল আফগানিস্তান।
পুঁজি মাত্র ২০৮ রান। সেটি নিয়েই বাংলাদেশ শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করতে পেরেছে বোলারদের কারণে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান। নিজের বোলিংয়ের সেই পুরোনো ধার খুঁজে পাওয়া সাকিব আজও ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। ৩০ রানে ২ উইকেট মোসাদ্দেকের। এ ম্যাচেই অভিষিক্ত এই তরুণের ব্যাটেই প্রথমে লড়াইয়ের পুঁজিটুকু পেয়েছিলো বাংলাদেশ। বাকি ব্যাটসম্যানদের কেউই দায়িত্ব নিয়ে খেলেননি। ৪৫ বলে ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক। শেষ জুটিতে রুবেলকে নিয়ে ৪৩ রানের জুটিটা গড়তে না পারলে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর তৃতীয়বারের মতো সহযোগী কোনো দেশের বিপক্ষে ২০০-র নিচে অলআউট হয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ।
শুরুটা যেমন দরকার ছিলো ঠিক তেমনটিই হলো বাংলাদেশের। চতুর্থ ওভারেই তিন বলের মধ্যে নওরোজ মঙ্গল ও রহমত শাহকে ফেরালেন সাকিব। কিন্তু সাকিবের জোড়া ধাক্কাটা প্রায় কাটিয়ে ফেলল আফগানিস্তান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে হাসমতউল্লাহ শহীদি ও মোহাম্মদ শেহজাদ যোগ করলেন ৪৫ রান। তখনই আবির্ভাব মোসাদ্দেকের, বোলার মোসাদ্দেক অবশ্যই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলটি খুব ভালো ছিলো না। কিন্তু সে বলেই এলবিডব্লু হয়ে ফিরলেন শহীদি। ওয়ানডেতে নিজের প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে গেলেন মোসাদ্দেক! বাংলাদেশের হয়ে এমন কীর্তি এর আগে কেউই করে দেখাতে পারেননি, ওয়ানডে অবশ্য এই কীর্তি আছে ২৩ জনের মোসাদ্দেকের ইতিহাস গড়ার আনন্দটা তাজা থাকতে থাকতেই আবারও বোলিংয়ে সাকিব। কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শেহজাদকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের পথটা দেখিয়ে দিলেন সাকিব। ২০৮ রান তারা করতে নেমে ৬৩ রানেই ৪ উইকেট নেই আফগানিস্তানের। ম্যাচ তো বাংলাদেশের দিকেই হেলে আছে ভীষণভাবে।
কিন্তু বাংলাদেশের পুরোনো দুই ‘শত্রু’ আসগর স্টানিকজাই আর মোহাম্মদ নবী প্রতিজ্ঞ চিত্তে দাঁড়িয়ে গেলেন। বোলিংয়ে ১৬ রানে ২ উইকেট পাওয়ার পর ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে গেলেন নবী। তাঁর সঙ্গে দাতে দাঁত চেপে লড়ে গেলেন স্টানিকজাই। আবার যখনই সুযোগ পেয়েছেন প্রতি আক্রমণে গেছেন দুজনে।

২৪ ওভারের জুটিতে ১০৭ রান যোগ করেন স্টানিকজাই-নবী। জয় থেকে ৩৯ রান দূরে থাকা অবস্থায় আম্পায়ারের অদ্ভুত এক সিদ্ধান্তে ফিরতে হলো নবীকে (৪৯)। মাশরাফির বলটি স্ট্যাম্পে লাগার পরও বেল পড়ল না, সে অদ্ভুত ঘটনাকেও ম্লান মনে হলো নবীকে দেওয়া এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তর কাছে। কিন্তু ওই ওভারেই আরেকটি সুযোগ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ। নজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল গিয়েছিল পেছনে। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের ঝাঁপাতে বড় দেরি হয়ে গেল। তবে পরের ওভারেই স্টানিকজাইকে (৫৭) ফেরালেন মোসাদ্দেক। ১৭৪ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন আফগানিস্তানের। আবারও ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ। কিন্তু ৫৭ বলে ৩৫ রানে সহজ সমীকরণটিই পথের কাঁটা ছিল বাংলাদেশের সামনে। পরের ২৫ বলে ১৫ রান করে সেই সমীকরণের দিকে ধীরে সুস্থেই এগোচ্ছিল আফগানিস্তান। নিজের শেষ ওভারে বল করতে এসে আবারও সাকিব-ঝলক। ফিরলেন রশিদ খান। ৪৭তম ওভারে বাংলাদেশ আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু স্টাম্পিংয়ের সহজতম সুযোগটি হাতছাড়া করলেন মুশফিক। জীবন ফিরে পেলেন নজিবুল্লাহ জাদরান। ৪৮তম ওভারে মাত্র দুই রান দিয়ে খেলাটা জমিয়ে দিলেন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু নিজের শেষ ওভারেই প্রথম বাউন্ডারি দিলেন মোসাদ্দেক। দ্বিতীয় বলের ওই ছক্কায় ওভারে এল ৯ রান। শেষ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন মাত্র ২ রান। প্রথম দুই বলে ডট দিয়ে অসম্ভব এক আশা দেখালেন প্রথম ম্যাচের নায়ক তাসকিন। কিন্তু পরের বলেই ওয়াইড দিয়ে ম্যাচকে নিয়ে এলেন সমতায়। ম্যাচ তো শেষ! তৃতীয় বলে চার মারতে গিয়ে আউট নজীবুল্লাহ, ক্যাচটা গেল মোসাদ্দেকের মুঠোতেই। কিন্তু না, আর কোনো নাটকীয়তা নয়। তাসকিনের চতুর্থ বলে চার। বল সীমানা ছাড়ার আগেই অবশ্য আফগানদের উদযাপন শুরু হয়ে গেছে।
অথচ উদযাপনটা বাংলাদেশেরই করার কথা ছিলো। শততম জয়ের…।