এনপিএল ক্রিকেট লিগের সিজন-ফোর চ্যাম্পিয়ন দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস

স্টাফ রিপোর্টার: জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন আর চোখ ধাঁধানো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমি আয়োজিত এনপিএল ক্রিকেট লিগের সিজন ফোর’র ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ। পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘খুলনা বিভাগে দেশসেরা ক্রিকেটার থাকলেও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে চুয়াডাঙ্গা জেলার কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এটি যেমন কষ্টের, সেই কষ্ঠকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন যেমন নিয়মিত ক্রিকেট চর্চা, তেমনি ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ক্রিকেট একটি ব্যয়বহুল খেলা। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে যে খেলাটির মাধ্যমে খুব কম সময়ে নিজেদেরকে মেলে ধরেছে সেটি হলো ক্রিকেট। তাই ভালো ক্রিকেটার তৈরির পাইপ লাইন করতে হলে এনপিএল ক্রিকেট লিগের মতো আরও প্রতিযোগিতা নিয়মিত করতে হবে। তাহলে এক সময় দেখা যাবে জাতীয় ক্রিকেটে চুয়াডাঙ্গার নামটিও উঠে আসবে। এ অগ্রযাত্রায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় ক্রিকেটার এবং সংগঠকদের পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অতিথি চুয়াডাঙ্গার কৃতিসন্তান মাইওয়ান মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গার জেলা সন্তান হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। কারণ আমি জেলাতে জন্মগ্রহণ করে মাইওয়ান গ্রুপের মাধ্যমে যেমন চুয়াডাঙ্গা জেলার নাম দেশের গ্রাম, শহর, নগর-বন্দরসহ দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। তেমনি সৃষ্টি করতে পেরেছি হাজারো বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের। আমি মনে করি মানুষ যদি কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে তাহলে তার মাথায় খারাপ কাজের চিন্তা আসে না। আর খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা বেশ সময় নিয়ে মাথা ঠা-া করে খেলতে হয়। তাই এ খেলা খেললে যুব সমাজ কখনই বিপথগামী হবে না।’
চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমির কো-চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান জোর্য়াদ্দার মিজাইলের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশিমুল বারী, এনডিসি সুচিত্র দাশ, জেলা পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটির পরিচালক (অর্থ) অধ্যাপক মো. আব্দুল মজিদ, কৃষি বিভাগের প্রধান ড. নাহিদ পারভেজ, মার্ভেলাস মাইওয়ান ও মিনিস্টার ফ্রিজের পরিচালক আব্দুল লতিফখান যুবরাজ, চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি শাহরিন হক মালিক, সহসভাপতি মুঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আহসান হাবিব, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা কেপিএল’র এরিয়া ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম, জাভিদ মটরসের জকির হোসেন, জেলা ফুটবল দলের সাবেক কৃতি ফুটবলার রেজাউল হক জোয়ার্দ্দার, রংধনু খেলা ঘরের জুয়েল রানা, প্রাণ কোম্পানির নুরুল্লা হক, গাংনীর আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি রুবায়েত বিন আজাদ সুস্থির প্রমুখ। আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে চ্যাম্পিয়ন দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস ও রানারআপ ফার্স্ট ক্যাপিটাল সুপার কিংসের হাতে ট্রফি ও মেডেল তুলে দেন অতিথিগণ। চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটি চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার সাবেক ভি.জে স্কুলের শিক্ষক প্রয়াত ওবেদুল আলম মালিকের স্মরণে তার পুত্র আমেরিকা প্রবাসী হাকিমুল আলম মালিক টিটনের সৌজন্যে রানারআপ দলের ট্রফি বিতরণ করা হয়।
গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচে টসে জিতে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সুপার কিংস নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০৬ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তোলে। তবে হাইস্কোরিং ফাইনালে নির্ধারিত ২০ ওভারের ৪ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায় দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস। ফলে ৫ উইকেটে জয়লাভ করে এনপিএল ক্রিকেট লিগ-সিজন ফোর’র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস। চ্যাম্পিয়ন হওযার গৌরব অর্জন করায় দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস’র মেন্টর সাবেক কৃতি ক্রিকেটার গিয়াসউদ্দিন পিনা সকল ক্রিকেটার ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খেলায় ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার লাভ করে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সুপার কিংস’র অধিনায়ক সাদ্দাম শেখ রকি, ম্যান অব দ্য ফাইনাল চ্যাম্পিয়ন দলের পিয়াস, হাইয়েস্ট উইকেট টেকার একই দলের ইসমাইল, হাইয়েস্ট স্কোরার ফার্স্ট ক্যাপিটাল সুপার কিংসের রাকিবুর রহমান রাকু ও বিগ সিক্সারের পুরস্কার লাভ করে একই দলের রাফেজ। ফাইনাল খেলাটি পরিচালনা করেন এসআই শুভ, র-ই রবিন, অফিসিয়াল স্কোরার রিয়াজ উদ্দিন ও বোর্ড স্কোরারের দায়িত্ব পালন করেন টি-রাসেল। টুর্নামেন্টটি সফলভাবে শেষ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক সাংবাদিক ইসলাম রকিব জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ জেলাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং যারা প্রতিদিন প্রতিটি ম্যাচে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন তাদেরকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি ৮টি টিম নিয়ে ওই এনপিএল ক্রিকেট লিগের উদ্বোধন করা হয়। ৮টি টিমে চুয়াডাঙ্গা জেলার অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী ১২০ জন ক্রিকেটার লিগে অংশগ্রহণ করে। লিগ পর্বের ১২টি ম্যাচ, দু-সেমিফাইনালে ২টি ম্যাচ ও গতকাল ফাইনাল ম্যাচের মধ্যদিয়ে ২১ দিনব্যাপী ১৫টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হলো চতুর্থ এনপিএল ক্রিকেট লিগ। লিগে অংশগ্রহণকারী টিমগুলো হলো কিংস ইলেভেন জীবননগর, আলমডাঙ্গা নাইট রাইডার্স, মুন্সিগঞ্জ টাইটান্স, দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস, সানরাইজার দশমাইল, ওয়ালটন কিংস, ফ্রিডম ফাইটার আটকবর ও দর্শনা ডেয়ার ডেভিলস।