আইসিসিতে ভারতের আয় আর দাপট দুটিই কমছে

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: একের পর এক ধাক্কা খেয়েই চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। লোধা কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবে এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিসিসিআই। আর সে অবস্থার পুরো ফায়দা তুলে নিয়েছে আইসিসির অন্য সদস্যেরা। কাল দুবাইয়ে ভোটাভুটিতে ভরাডুবি হয়েছে ভারতের। নতুন পরিচালন কাঠামো ও আর্থিক সংস্কার প্রস্তাব দুটোই পাশ হয়ে গেছে ভারতের বিরোধিতা সত্ত্বেও।

কাল পরিচালন কাঠামোর বিরোধিতায় শুধু শ্রীলঙ্কাকেই সঙ্গী পেয়েছে ভারত। নতুন কাঠামোর প্রশ্নে ১২-২ ব্যবধানে জেতে সংস্কারপন্থীরা। আর আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠনে তো শ্রীলঙ্কাকেও সঙ্গী পায়নি ভারত; হেরেছে ১৩-১ ভোটে। এখন ভোটাভুটি হলেও আগামী জুনে আইসিসির বার্ষিক সভাতেই আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হবে সব সংস্কার প্রস্তাব। অথচ ফেব্রুয়ারিতেও প্রাথমিকভাবে শ্রীলঙ্কাকে পক্ষে পেয়েছিল বিসিসিআই। জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডকেও টোপ গেলানোর ব্যবস্থা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলো ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় বোর্ডের প্রশাসক কমিটির দায়িত্ব ছিল এই দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে আনার। কিন্তু কাজটায় যে তারা সফল হয়নি সেটা কালকের ফলই বুঝিয়ে দিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড কর্মকর্তা বিস্ময় গোপন করেননি, ‘বিসিসিআই দুটি প্রস্তাবেরই বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। কারণ দুটোই আমাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। জিম্বাবুয়েকে আইসিসি ১৯ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মনোহর কী হিসেব করে এ প্রতিশ্রুতি দিল? কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, বাংলাদেশও আমাদের বিপক্ষে গেল! মিটিংয়ে তো মনোহর বলেই দিল, ২৯০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাবটি “হয় মেনে নিতে হবে নইলে চলে যেতে হবে। ভারতের খেপে যাওয়ার যাওয়ার কারণ আছে। ২০১৪ সালে পাস হয়েছিল ‘তিন মোড়ল’ নীতি। ‘বিগ-থ্রি’ নীতিতে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইসিসির সম্ভাব্য আয়ের ভাগ বণ্টনের একটা বর্ণনা দেওয়া হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিলো, আগামী ৮ বছরে আইসিসির আয়ের ২৭.৪ শতাংশই যাবে বিসিসিআই, ইসিবি ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ভাগ বাঁটোয়ারাটাও ছিল অদ্ভুত। অস্ট্রেলিয়া পাবে ২.৭ ভাগ অর্থ, যুক্তরাজ্যের ভাগে ৪.৪ ভাগ। আর ভারত একাই নিয়ে নেওয়ার কথা ২০.৩ ভাগ! এত দিন এ নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে তত্ত্বটা ছিলো, ৮ বছরে আইসিসি থেকে ভারত নিয়ে নেবে ৫৭০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তবে পরে অঙ্কটা ৪৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বলেই জানিয়েছে আইসিসি। নতুন যে আর্থিক মডেল পাস হতে যাচ্ছে, সেখানে বিসিসিআইয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে মাত্র ২৯০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক ঝটকায় বিসিসিআইয়ের ভাগের অঙ্কটা কমে গেছে ১৫০ মিলিয়ন ডলার! সে তুলনায় অন্য ‘দুই মোড়লে’র কোনো ক্ষতি হয়নি। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড পাচ্ছে প্রায় আগের মতোই, ১৪৩ মিলিয়ন ডলার। আর অস্ট্রেলিয়া বাকি ছয় দলের মতো পাচ্ছে ১৩২ মিলিয়ন, যেটা তিন মোড়লের আমলেও পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। পূর্ণ সদস্যদের মাঝে শুধু জিম্বাবুয়েই এক শ মিলিয়নের কম আয় করবে, পাচ্ছে ৯৪ মিলিয়ন ডলার। সহযোগী দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে ২৮০ মিলিয়ন! ভারত এ ব্যাপারটাও মেনে নিতে পারছে না, ‘সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো কেন এত অর্থ পাবে সেটা আইসিসি ব্যাখ্যা করছে না। এটা আসলে শশাঙ্ক মনোহরের প্রতিহিংসা।’ প্রতিহিংসার জবাবটা সেভাবেই দেওয়ার ইচ্ছা বিসিসিআইয়ের। ভারতীয় বোর্ড কর্মকর্তা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ভারতের সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন এর প্রতিক্রিয়ায়, ‘সব পথই খোলা আছে। তারা (ভারতের বিপক্ষে যারা ভোট দিয়েছে) সদস্যদের অংশগ্রহণ চুক্তিকে অসম্মান করেছে। এখন আমরা ফিরে যাব এবং বিশেষ সভায় আলোচনা করব। যুগ্ম সচিব সবাইকে পরিস্থিতির কথা জানাবেন এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখানে নেয়া হবে।’