অন্ধকারে আলোকিত পাকিস্তান

মাথাভাঙ্গা মনিটর: করাচির বেদনার ক্ষতে প্রলেপ শারজায়? নাকি আরও বেশি কিছু! এ জয়ের মাহাত্ম্য আসলে আরও অনেক বেশি। যেখানে দলের সাথে জয়ী আসলে খেলাটাও। পাকিস্তান জিতলো, জিতলো ক্রিকেটও! ‘অন্ধকারে আলোকিত জয়’ ১৩ বছর ধরে এ শব্দমালা শুধু ভোঁতা বেদনাই জাগিয়েছে পাকিস্তানিদের মনে। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে করাচির এক গোধূলীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অসাধারণ এক জয় পেয়েছিলো ইংল্যান্ড। প্রায়ান্ধকারে হাসতে হাসতে ড্রেসিংরুমে ফিরছেন নাসের হুসেইন ও গ্রাহাম থর্প ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত ছবিগুলোর একটি। গতদিনের শারজা মনে করিয়ে দিলো সেই করাচিকে। এবার অভাবনীয় এক জয়ের আনন্দে হাসলো পাকিস্তান। একটা পর্যায়ে শ্রীলঙ্কা নয়, পাকিস্তানের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ালো মরে আসা আলো। লঙ্কান ফিল্ডাররাও খাবি খাচ্ছিলেন বল খুঁজে পেতে। কিন্তু অন্ধকার আর শ্রীলঙ্কা, দু প্রতিপক্ষকেই হারিয়ে দলকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিলেন আজহার-মিসবাহরা। পাকিস্তানের কাজটি ছিলো আসলে ইংল্যান্ডের চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। চতুর্থ দিন শেষেও এ ম্যাচের ভাগ্যে ড্র ছাড়া অন্য কিছু দেখেনি সম্ভবত পৃথিবীর শেষ আশাবাদী লোকটিও। শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করাই তো পাকিস্তানের জন্য মনে হচ্ছিলো দুরূহ, এরপর রান তাড়া তো বাকি ছিলই। লাঞ্চের আগে আগে শ্রীলঙ্কার শেষ ৫ উইকেট তুলে নিতে পারলো পাকিস্তান। ম্যাচের ভাগ্যে তখনো ড্র ছাড়া অন্য কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। শেষ দিনে পুরোটা খেলেও তিনশ রান তাড়া করা দুরূহ, সেখানে ৫৯ ওভারে ৩০২ রান তো অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরায়ত অননুমেয় চরিত্র ভর করলো এ দলটির ওপরও। প্রথম চারদিনের শম্বুকগতির ব্যাটিং যে ম্যাচকে নিয়ে গিয়েছিল প্রস্তর যুগের ক্রিকেটে, শেষ দিনে সেই ম্যাচেই টি-টোয়েন্টির উত্তেজনা! ৬ ওভারে ৩৩ তুলে দু ওপেনার শুরুতেই দিলেন গতি। এ গতিটা ধরে রেখেছেন সব ব্যাটসম্যানই। তবে জয়ের বিশ্বাসটা দিয়েছেন সরফরাজ আহমেদ। রানের গতিতে জোয়ার আনার জন্য এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে পাঠানো হলো পাঁচে। ফাঁদটা কাজে লাগলো দারুণভাবে। আরেক পাশে আজহার আলীও ছিলেন দারুণ স্বচ্ছন্দ। চতুর্থ উইকেটে দু জনের ৮৯ বলে ৮৯ রানের জুটিতে ম্যাচ পৌঁছায় নাটকীয় মোড়ে। আর পঞ্চম উইকেটে আজহার-মিসবাহর ১১৯ বলে ১০৯ রানের জুটিতে জয়ের খুব কাছে যায় পাকিস্তান। ১০ ওভার বাকি থাকতে সব ফিল্ডারকেই সীমানায় পাঠিয়েছিলেন ম্যাথুস, তবু রানের গতিতে বাধ দিতে পারেননি। ফর্মের কারণে জায়গা হারিয়ে এ টেস্টেই দলে ফেরা আজহার খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ফিরেছেন জয় থেকে সাত রান দূরে থাকতে। মিসবাহ তো বরাবরের মতোই ছিলেন দলের ভরসা হয়ে, পরিস্থিতির দাবি মেটানো ইনিংসে ফিরেছেন দলের জয় সাথে নিয়ে। আজহারের কাছে এটি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মূল্যবান ইনিংস। মিসবাহ বলছেন, অধিনায়ক হিসেবে সেরা মুহূর্ত আর হোয়াটমোরকে বিদায়ী উপহার। আপ্লুত বিদায়ী কোচ ডেভ হোয়াটমোরও, ‘বিদায়টা এর চেয়ে ভালো হতে পারতো না।