ক্ষুধার গল্প

অনিক শুভ

– মা, ও মা। খিদে পেয়েছে। খেতে দাও।
-পড়া কমপ্লিট হয়েছে?
– আর একটু আছে।
– ওকে কমপ্লিট করে খেতে এসো।
টুনি। ক্লাস ফোরে পড়ে। অনেক মেধাবী। সব সময় অজানাকে জানার প্রতি আগ্রহ বেশি তার। কয়েকদিন ধরে ওর মাথার মধ্যে কিছু প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। এই যেমনÑ আমাদের কেন খিদে লাগে, খিদে পেলে আমরা কিভাবে বলতে পারি, আবার খাবার খেলে খিদে চলে যায় কেন ইত্যাদি। নিজে নিজে অনেক ভাবল কিন্তু উত্তর মিলাতে পারল না। এমন সময় বাবা ওর রুমে প্রবেশ করল।
– কিরে মা? কি করিস? স্কুলের পড়া সব কমপ্লিট হয়েছে?
– হয়েছে বাবা।
– তাহলে খেতে চল। সকালে ক্লাস আছে। খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বি।
– আচ্ছা বাবা আমাদের খিদে লাগে কেন?
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
– বলো না প্লিজ…
– ওকে। আমাদের মস্তিষ্কের একটি অংশের নাম হল ‘হাইপোথ্যালামাস’। এখানে আছে ভোজন কেন্দ্র, যা খিদের অনুভূতি জাগায়।
– আমাদের যখন খিদে পাওয়া দরকার আর কতটুকু খাব সেটা কি ভোজন কেন্দ্র পরিচালনা করে?
– না মা। ভোজন কেন্দ্রকে পরিচালনা করে ‘পরিতৃপ্তি কেন্দ্র’। আর এই পরিতৃপ্তি কেন্দ্র ভোজন কেন্দ্রের কাজকর্ম দেখাশুনা করে। মানে কখন খিদে পাওয়া দরকার, কতটা খাওয়া উচিত এসব কাজ তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
– বুঝলাম। এখন বলো খাবার খাওয়ার পর খিদে চলে যায় কেন?
– বলছি। তার আগে তোমাকে খিদে কেন লাগে সে সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানতে হবে। আমাদের শরীরে যখন খাবারের ঘাটতি দেখা দেয় তখন রক্তে শর্করা আর কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে যায়। আর রক্তে শর্করা কম থাকলে পরিতৃপ্তি কেন্দ্র ভোজন কেন্দ্রের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেয়। ফলে ভোজন কেন্দ্রের উত্তেজনা বাড়ে, আর আমাদের খিদের অনুভূতি আসে। এরপর আমরা যখন খাবার খায়, রক্তে শর্করা বেড়ে যায়। পাকস্থলীর মধ্যে খাবারের পরিমাণ নিদ্রিস্ট সীমানায় পৌঁছালে পরিতৃপ্তি কেন্দ্র ভোজন কেন্দ্রের ওপরে বিধিনিষেধ চাপায়। তখন ভোজন কেন্দ্রের উত্তেজনা কমে যায়। আর আমাদের খিদেও চলে যায়।
এই দিকে টুনির মা ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে।
– আমি খাবার নিয়ে বসে আছি। তোরা বাবা-মেয়ে খেতে আসবি কখন? খাবার ঠা-া হয়ে যাচ্ছে তো।
টুনির বাবা বলল,
চল মা। খেয়ে আসি। খাবার পর গল্প করব।
– হুম। চল বাবা।