১৬ বছর ধরে বন্ধ ওজোপাডিকোর উপকেন্দ্র : মেরামতের উদ্যোগ নেই

ঝিনাইদহের ৬টি ইউনিয়নের ৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুসেবা থেকে বঞ্চিত

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে অবস্থিত ওয়েস্টজোন পাউয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহকসেবা কেন্দ্রটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ ১৬ বছর। স্টেশন ভবনটিতে বাস করছে শিয়াল-কুকুর। সামনের খোলা জায়গায় বসে মাদকসেবীদের নিয়মিত আড্ডা।

এদিকে সাবস্টেশনটি বন্ধ থাকায় এর আওতাধীন সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৮ হাজার বিদ্যুতগ্রাহক দীর্ঘদিন গ্রাহকসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ শহর অবস্থিত সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুত সঞ্চালন থাকায় ওই এলাকার গ্রাহকরা ঠিকমতো ভোল্টেজ পাচ্ছেন না। আর লাইনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে গোটা এলাকার সঞ্চালন বন্ধ করে সেই ত্রুটি মেরামত করতে হচ্ছে। যার কারণে সময় নষ্ট হয় বেশি। যতোক্ষণ মেরামত শেষ না হচ্ছে ততোক্ষণ গোটা এলাকা থাকছে অন্ধকারে।

হাটগোপালপুর বাজারের বাসিন্দা মসিয়ার রহমান জানান, ১৯৮৮ সালে হাটগোটালপুর বাজারে এ সাবস্টেশনটি স্থাপন করা হয়। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান হাটগোপালপুর বাজারের পাশ্ববর্তী গ্রাম হুদা-পুটিয়ার বাসিন্দা সামছুল ইসলাম এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এ সাবস্টেশনটি স্থাপন করেন। এ সাবস্টেশনটি স্থাপনের পর তাদের এলাকার পদ্মাকর, হরিশঙ্করপুর, কালিচরণপুর, পোড়াহাটি, দোগাছী ও ফুরসন্দি ইউনিয়নের বিদ্যুত গ্রাহকরা এ সেবাকেন্দ্র থেকে সেবা পেয়ে আসছিলেন। ৩৩ হাজার কে.বি লাইন থেকে বিদ্যুত নিয়ে এ সাবস্টেশনের ট্রান্সফারমারের মাধ্যমে ১১ হাজার কে.বি লাইনে সরবরাহ করা হতো। এতে এলাকার গ্রাহকরা সঠিকভাবে বিদ্যুত পেতেন। ভোল্টেজ ভালো থাকায় তাদের এলাকার ছোট ছোট মিল-কলকারখানা, বাসা বাড়ির টিভি-ফ্রিজ ভালো ভাবে চলতো।

এলাকার বাসিন্দা ডা. লোকমান হোসেন জানান, ট্রান্সফারমার ত্রুটির কথা বলে ১৯৯৭ সালে হঠাত করে সাবস্টেশনের বন্ধ করে দেয়া হয়। এখানে কর্মরত ৬ জন কর্মচারীও ক্রমান্বয়ে অন্যত্র চলে যান। পড়ে থাকে সরকারের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে যায় স্টেশনটি। এভাবে পড়ে থাকার কারণে ওই স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি অনেক চুরি হয়ে গেছে। ভবনটির জানালা-দরজা ভেঙে পড়েছে। ঘরের মধ্যে বাস করছে শিয়াল-কুকুর। আর বাইরে মাদকসেবীদের আড্ডা চলে প্রতিনিয়ত।

হাটগোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ী সুজিত কুমার জানান, এ সাবস্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে গ্রাহকরা বিদ্যুতসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দূর থেকে সঞ্চালন লাইন আসায় ঠিকমতো ভোল্টেজ পাচ্ছেন না। হাটগোপালপুর বাজারে প্রায় ১ হাজার চাতাল রয়েছে। আছে ১০০টি রাইচ মিল ও ১০টি অটো রাইচ মিল। এছাড়া রয়েছে প্রায় ৭’শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যারা ঠিকমতো ভোল্টেজ না পেয়ে প্রায়ই মেশিন বন্ধ করে বসে থাকতে হয়। এছাড়া বাসা বাড়িতে ভোল্টেজ সমস্যার কারণে প্রায়ই টিভি-ফ্রিজ নষ্ট হচ্ছে। সুজিত কুমার আরো জানান, লাইনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে ঝিনাইদহ থেকে চেক করার পর ত্রুটি ধরা পড়ে। আর এ চেক করতে করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। ততোটা সময় দীর্ঘ এলাকার গ্রাহকদের থাকতে হয় অন্ধকারে। কিন্তু স্টেশনটি চালু থাকা কালে সাবস্টেশনটির আওতাধীন লাইন চেক করে সল্প সময়ে ভালো করা সম্ভব হতো। যা গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতো।

এ ব্যাপারে ওজোপাডিকো’র ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কি কারণে স্টেশনটি বন্ধ করা হয়েছিলো তা তিনি বলতে পারেন না। তবে এটা চালু হলে গ্রাহকদের সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীরাও উপকৃত হবেন। কোনো ত্রুটি দেখা দিলে গোটা এলাকার লাইন বন্ধ করতে হবে না। পাশাপাশি অনেক খোঁজাখুজিও করতে হবে না ত্রুটি ধরতে। যে কারণে তারা বিষয়টি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। আশা করছেন অল্প দিনের মধ্যে এ সাবস্টেশনটি আবার চালু হবে। উপকৃত হবে ওই এলাকার হাজার হাজার গ্রাহক।