১০ ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে বসুন্ধরা সিটির আগুন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর পান্থপথে বহুতল বিপণি বিতান বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগার পর প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে অগ্নি নির্বাপক বাহিনী। আগুনের যখন সূত্রপাত হয়, তখন সবেমাত্র দোকান খোলা শুরু হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো কম। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

উদ্ধারকাজের প্রধান সমন্বয়ক ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, আগুন লাগার পর ভবনের ছাদে আটকা পড়া ১৯ জনকে দুই ধাপে উদ্ধার করেছেন তারা। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগার কথা শোনা গেলেও ফায়ার সার্ভিস বা কোনো দোকানকর্মী এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি।

বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের ইনচার্জ টিআইএম লতিফুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আগুনে লেভেল-৬’র সি ব্লকের প্রায় একশ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এর মধ্যে ৬/৭টি দোকান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। উপ পরিচালক সুজিত রায়কে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান বলেন, আমরা দোকান মালিকদের সঙ্গে বসব। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখব কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য বসুন্ধরা সিটি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এমএ হান্নান আজাদের দাবি, সি ব্লকের একশ দোকানের প্রায় সবগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ধোঁয়া, আতঙ্ক: বেলা ১১টার দিকে ছয়তলা থেকে ধোঁয়া দেখতে পাওয়ার কথা ঘটনাস্থল থেকে জানান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহ-সম্পাদক আলিফ উল্লাহ খান। আতঙ্কিত হয়ে ভবনটি থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা দ্রুত বেরিয়ে আসতে দেখেন তিনি। সে সময় ওই এলাকায় হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো। বসুন্ধরা সিটি থেকে বেরিয়া আসা বিভিন্ন দোকানের কর্মীরা জানান, আগুন লাগার পর নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক বাহিনীই প্রথমে কাজ শুরু করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। বেলা সোয়া ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর শাকিল নেওয়াজ আগুন ‘অনেকটা নিয়ন্ত্রণে’ আসার কথা জানান। তবে ভেতরে অনেক দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে সে সময় জানান তিনি।

কর্মী জানান, ছয়তলায় একটি জুতার দোকান থেকে আগুন লেগেছে বলে তারা শুনেছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা সবাই বেরিয়ে এসেছেন। চতুর্থ তলার এক পোশাকের দোকানের কর্মী আব্দুল মোমিন বলেন, ষষ্ঠতলার উত্তর-পূর্ব কোণে একটি জুতার দোকান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিলো। তখন সবাই ‘আগুন আগুন’ বলে নেমে যায়। ওই সময় সবাই কেবল দোকান খুলছিলেন। কাস্টমার ছিলো কম। সবাই সুন্দরভাবে নেমে যেতে পেরেছে, বলেন মোমিন।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, শুরুতে তারা ভবনের কাচ ভাঙার পরিকল্পনা নিয়ে গেলেও বসুন্ধরা সিটি কর্তৃপক্ষ ভাঙতে দেয়নি। তখন কাচ ভাঙা গেলে ধোঁয়া বেরিয়ে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হত বলে তার ধারণা। আগুন লাগার পর উৎসুক জনতার ভিড়ের মধ্যে দুপুরের দিকে বসুন্ধরা সিটির সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাস্তা যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

বার বার কেন বসুন্ধরায়? আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। জনপ্রিয় এই শপিং মলে আবারও আগুনের ঘটনায় বাইরে জড়ো হন সংবাদকর্মীরাও।  তারা মেয়রের কাছে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিও জানতে চাই, বার বার কেন তাদের মার্কেটে আগুন লাগে। এই পর্যন্ত তিনবার এই মার্কেটে আগুন লেগেছে।’ রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এই শপিং কমপ্লেক্সে লাগোয়া দুটি ভবন রয়েছে। এর পান্থপথ সড়কমুখী মূল বিপণি বিতান আট তলা। পাশের ১৯ তলায় রয়েছে বসুন্ধরার করপোরেট অফিসসহ বিভিন্ন কার্যালয়। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ এই ভবনের ওপরের দিকে ভয়াবহ আগুনে ৭ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন শতাধিক। এরপর ওই বছর অগাস্ট এবং ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা সিটিতে আবারও অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

নাশকতার সন্দেহ দোকানমালিকদের: দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এমএ হান্নান আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, নাশকতার সম্ভাবনা তারা ‘উড়িয়ে দিতে পারছেন না’। অন্যবার যে আগুন লেগেছে তার চেয়ে এর প্রভাবটা বেশি। বিভিন্ন এজেন্সি থেকেও আমাদের নাশকতার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিলো। এসব কারণে আমরা নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেবো না। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের ইনচার্জ টিআইএম লতিফুল হোসেন জানান, বুধবারের আগে মার্কেট আর খোলা সম্ভব হবে না বলেই তারা মনে করছেন।