হরতালের বাজার ধরতে খুলনায় চুয়াডাঙ্গা কুলচারার কপিচাষি আসমাউল

লাখ টাকায় কপি বেচে বেজাই খুশি : অজ্ঞান

 

কামরুজ্জামান বেল্টু/উজ্জ্বল মাসুদ: গৃহকর্তা কপি নিয়ে গেছেন খুলনায়, পরিবারের সদস্যরা কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন? তাইতো বার বার মোবাইলফোনে খোঁজ নিচ্ছিলেন কপি আবাদী আসমাউল হক বিশ্বাসের। স্ত্রীও ঘুরে ফিরেই টিপছিলেন মোবাইলফোনের বোতাম। পরশু বিকেলে খুলনায় কফি বিক্রি করে  আসমাউল বিশ্বাস তার স্ত্রীকে জানান, বেশ ভালো দামেই বিক্রি হয়েছে। কপিগুলো বিক্রি করে এক লাখ টাকা পেয়েছি। চিন্তা করো না, রাতের ট্রেনেই ফিরছি। চুয়াডাঙ্গা কুলচারার আসমাউল পরশুর রাতের ট্রেনে ফিরেছেন ঠিকই, সুহালে নয়। বাড়ির বদলে তাকে পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে অজ্ঞান অবস্থায়। অবশেষে গতকাল রোববার সকালে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্টেশন থেকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা কুলচারার আব্দুস সামাদ বিশ্বাসের ছেলে আসমাউল হক বিশ্বাস (৪৫) খাটোআবাদি। পাতাকপি, বাঁধাকপিসহ হরেক পদের আবাদ করেন তিনি। হরতাল। তাই তিনি ট্রেনযোগে ৪ ঢপ ও ২ ঝুড়ি কপি নিয়ে বিক্রির জন্য খুলনার উদ্দেশে রওনা হন। ভালোই ভালোই খুলনায় পৌঁছান তিনি। খুলনায় হরতালের বাজারে বেশ চড়াদাম পেয়ে খোশমেজাজেই ঘন ঘন স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে মোবাইলফোন কথা বলেন। বাড়ির লোকজনও বার বার ফোন করে কখন ফরছো, গরম ভাত রেধে রাখবো কি-না এসব জানতে চেয়ে বার বার মোবাইলফোনে জালাতে থাকে। সন্ধ্যায় আসমাউল হক বিশ্বাস বলেন, কপিগুলো বিক্রি করে এক লাখ টাকা পেয়েছি। তোমরা চিন্তা করো না, আমি ঠিক ভালোই ভালোই বাড়ি পৌঁছে যাবো। এ কথায় বাড়ির লোকজন বুক বেধে বসে ছিলেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলো, সন্ধ্যায় ওঠা অর্ধেক চাঁদটাও আড়াল হলো। অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরাচ্ছেই না। এক সময় সকাল হলো। লোকটা বাড়ি ফিরলো না। অতোগুলো টাকা নিয়ে ট্রেনে কি কিছু হলো? প্রশ্নটা পরিবারের সদস্যদের কুরে কুরে খেলেও কোথায় গিয়ে খোঁজ করবে তা যেন বুঝতেই পারছিলো না। অবশেষে খবর পেলো, চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। এ খবরে পরিবারের লোকজন ছুটলেন হাসপাতালে। পরিবারের সদস্যের মধ্যে কেউ কেউ টাকা হারানোর জন্য হাহুতাস করলেও আসমাউলের স্ত্রী অবশ্য বলেছেন, টাকা যায় যাক, লোকটাকে তো ফেরত পেয়েছি। এতেই খুশি। এখন সুস্থ করে সুহালে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি।

কী হয়েছিলো রেলগাড়িতে? কি আবার হবে! অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাই হয়তো কিছু খাওয়ানোর পর অজ্ঞান করে হাতিয়ে নিয়েছে অতোগুলো টাকা। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা আর কতোজনকে এভাবে সর্বশান্ত করে ধরা পড়বে? কেউ জানে না। গতপরশু শনিবার চুয়াডাঙ্গার পিটিআই মোড় থেকে লোকাল বাসযোগে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে হারান ৫ হাজার টাকা। তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে না ফিরতে আবারও অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা একজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রোধে পুলিশ প্রশাসনের লাগাতার অভিযান চায় এলাকাবাসী।