স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বললেন

আবার ক্ষমতায় এলে জেলা ভিত্তিক বাজেট

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনেও জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, যে আস্থা-বিশ্বাস নিয়ে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, সেই বিশ্বাস আমরা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। দেশ আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে জনগণ আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আনবে। গতকাল শনিবার বিকেলে গণভবনে সারাদেশ থেকে আগত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার মেয়রদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আগামীতে ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন এবং দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যে কাজগুলো শুরু হয়েছে সেগুলো শেষ করতে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় আসতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে নতুন কাজও শুরু করতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে দেশের সেবা করতে পারবো ইনশাল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা চলছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় এসে শুধু নিজেদের ধন-সম্পদ বানানো এবং লুণ্ঠিত অর্থ বিদেশে পাচার করতেই ব্যস্ত থাকে তাদের দিয়ে দেশের উন্নতি হবে কীভাবে? যারা দেশের জন্য ও স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ করে তারা ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই যে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়, দেশ স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে গড়ে ওঠে তা আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় এলে ব্যাপকভিত্তিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার শুধু দেশের উন্নয়নের মূল পরিকল্পনা, বাজেট প্রণয়ন ও সবকিছু মনিটরিং করবে। আর তা বাস্তবায়ন করা হবে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। কোন জেলায় এবং জেলাধীন সকল উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পর্যন্ত কী কী সমস্যা আছে, কী কী উন্নয়ন আগে করতে হবে তা জেনে নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করা হবে। এমনভাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে যাতে প্রতিটি এলাকার মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সফলতা তুলে ধরে বলেন, পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নই আমাদের সরকারের মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশের প্রতিটি জায়গায় আমরা উন্নয়ন করেছি।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়েই আমরা সংবিধানের এ সংশোধন করেছি। তারপরও যারা বলেন, তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে, হয় তারা জেনে বলেন না অথবা বলতে চান না।

প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে নেতৃবৃন্দের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র বেগম সেলিনা হায়াত আইভীসহ সারাদেশের আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৮৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ৬৮০ ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১৭৯টি পৌরসভার মেয়র অংশ নেন। মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা নিজ এলাকার কিছু মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে নানা ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করলেও দেশের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে সকল মান-অভিমান, দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মতবিনিময় সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।