সেই পাজেরো উদ্ধার আরোহীদের নিয়ে রহস্য

 

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে সীমান্ত পেরিয়ে আসা পাজেরো দুটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে রহস্য রয়ে গেছে এর আরোহীদের নিয়ে। কারা ছিলো এর আরোহী? কোথায় তারা? নানা প্রশ্ন সর্বত্র। আলোচনা চলছে- ভারত থেকে আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করে কারা নিয়ে এলো গাড়ি, কেনইবা নিয়ে এলো কিংবা গাড়ি দুটিতে কোনো অস্ত্র বা বিস্ফোরক চালান ঢুকলো কি-না এসব প্রশ্ন  ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে। প্রশাসন বলছে, আন্তর্জাতিক চোরাকারবারীরা এসব গাড়ি নিয়ে সীমান্ত পথে বাংলাদেশে ঢুকেছে। রাতের আঁধারে সীমান্তপথে বাংলাদেশে ঢুকছে কোটি কোটি টাকার পাজেরো, মার্সিডিজ গাড়ি। স্থলবন্দর দিয়ে এগুলো প্রবেশ করে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ তথ্যটির সত্যতা জানালো সুতারকান্দি স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। এক বছর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক কাবুল মিয়া একটি পাজেরো গাড়ি নিয়ে সুতারকান্দি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতের কাস্টমসের কাছে এ তথ্য থাকলেও বাংলাদেশের কাস্টমসের কোথাও এর কোনো প্রমাণ নেই। অথচ বৃহস্পতিবার ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সাংবাদিকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে এ তথ্য দিয়েছে।

এদিকে, সুতারকান্দি শুল্ক স্টেশন দিয়ে অনুপ্রবেশকারী পাজারো জিপ দুটি নগরী থেকে উদ্ধার হলেও আরোহীদের খুঁজে পায়নি পুলিশ। তবে, পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি যেহেতু উদ্ধার হয়েছে এর আরোহীরাও গ্রেফতার হবে।

যেভাবে উদ্ধার হলো গাড়ি দুটি: গত বৃহস্পতিবার সকালে বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি সীমান্ত ব্যরিকেড ভেঙে বাংলাদেশে প্রবেশ করা গাড়ি দুটির খোঁজে গোটা বাংলাদেশে তারবার্তা পাঠানো হয় সিলেটের পুলিশ প্রশাসন থেকে। এক সাথে সবকটি সীমান্তপথে নজরদারি বাড়ানো হয়। তবে, ঘটনার পর থেকেই সিলেট জেলা ও মেট্রো পুলিশ অনুমান করছিলো দুটি পাজেরো জিপই সিলেটে ঢুকেছে। এ কারণে দুপুর থেকে সিলেটে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার গভীররাতে পরিত্যক্ত অবস্থায় সিলেট নগরীর উপশহর ও কুমারপাড়া থেকে জিপ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মহানগর পুলিশসূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহরের ই ব্লকের সিপ্রং টাওয়ারের সামনে ৬নং রোডের হোয়াইট প্যালেস নামক বাসার সামনে থেকে কালো পাজারো জিপ (রেজি নং-এলভি ৫২ জেডআরও) উদ্ধার করে। এ সময় গাড়িটি স্টার্ট দেয়া অবস্থায় ছিলো। রাত ২টার দিকে নগরীর কুমারপাড়াস্থ জালালাবাদ অটো সার্ভিসিং থেকে সিলভার কালারের জিপটি (রেজি নং- এক্স ৮৭৫ ওএভি) উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে গাড়ি দুটি সিলেট কোতোয়ালি থানায় রয়েছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা: উপশহরে গাড়ি উদ্ধারের খবরে সেখানে ছুটে যান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিরাব চন্দ্র মাঝি, ৱ্যাব-৯ এর অধিনায়ক রাশেদ সাত্তার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। কালো রঙের পাজেরো গাড়িটি রাস্তার পাশে দেখে অভিযান পরিচালনাকারী দলের প্রধান সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মো. আইয়ূব গাড়িতে তল্লাশি চালান। এ সময় গাড়ির মধ্যে বিস্ফোরক থাকার আশঙ্কায় ৱ্যাবের বিশেষজ্ঞদল সেখানে পৌঁছে ফের তল্লাশি চালায়। তবে গাড়িতে কিছুই পাওয়া যায়নি। এডিসি আইয়ুব জানান, তাৎক্ষণিক গাড়ির পজিশিন দেখে বোঝা গেছে কয়েক দিন গাড়িটি জার্নিতে ছিলো।

শাদা পাজেরোটির রঙ দেয়া চলছিলো: কুমারপাড়াস্থ জালালাবাদ অটো সার্ভিসিং থেকে উদ্ধারের সময় সিলভার কালারের জিপটির কালার পরিবর্তনের চেষ্টা চলছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ওই অটো সার্ভিসে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ দেখতে পায় বেশ কয়েকজন কর্মচারী গাড়িটির কালার পরিবর্তনের চেষ্টা করছিলো। এছাড়া গাড়ির বেশ কিছু পার্টস খুলে ফেলাও হয়েছিলো। এ অবস্থায় পুলিশ সেখানে গিয়ে কর্মচারীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় কর্মচারীরা পুলিশকে জানায়, কাবুল নামের এক ব্যক্তি তাদের ওয়ার্কশপে ওই গাড়িটি রেখে গেছে এবং বলে গেছে রঙ পরিবর্তন করে দিতে। অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা জানান, সকালে গেলে আগের মতো গাড়ি পাওয়া যেতো না। এক রাতেই তারা গাড়ির রঙ পরিবর্তন করে ফেলত। তারা জানান, ঘটনার পর থেকে জালালাবাদ অটোকে নজরদারির মধ্যে রাখা রয়েছে।
তিন লন্ডনীর খোঁজে পুলিশ: গাড়ি নিয়ে আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক কাবুল মিয়া (পাসপোর্ট নং-জিবিআর ৪৫৪৭৯৩৩৫৬), মো. অন্তর আলী (পাসপোর্ট নং-জিবিআর ৬৫২৪৪১৪৮৭) ও মো. আছকর উদ্দিন (পাসপোর্ট নং-জিবিআর ৫০৮৮৯৮৫৫৮) এর সন্ধানে গত বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে কাবুল মিয়া বিশ্বনাথ উপজেলার হাজী আবদুল বাকির ছেলে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তবে তাদের কোন খোঁজ পায়নি পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশ জানায়, পাজারো জিপ দুটি উদ্ধার করা হয়েছে। এখন গাড়িতে আসা তিন ব্রিটিশ নাগরিকের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।