সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক বিল পাস

স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩ গতকাল মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলে গ্রামীণ ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি সংক্রান্ত বলবত্ অন্য যেকোনো আইনের বিধানসমূহও এখন থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিলটি উত্থাপন করার পর পাস করার প্রস্তাব করেন। বিরোধীদলের সদস্যরা বিলটির ব্যাপারে জনমত যাচাই-বাছাইসহ সংশোধনীর প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের অনুপস্থিতিতে কোনো প্রস্তাবই সংসদে উত্থাপিত হয়নি। ফলে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। গত ২৭ অক্টেবার অর্থমন্ত্রী বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংসদে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার পর পাস হয়।

বিলে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারি করা অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক নতুন আইনে এমনভাবে বহাল থাকবে যেন, তা এ আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে এ ব্যাংক এখন থেকে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ দ্বারা পরিচালিত হবে। বোর্ডের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন যিনি সরকার নিযুক্ত পরিচালকদের মধ্যে থেকে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। নির্বাচিত পরিচালকদের কার্যকাল হবে তিন বছর। কোনো পরিচালক একাধিক্রমে দু মেয়াদ পরিচালক থাকার পর তিন বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত আর পরিচালক পুনঃনির্বাচিত হতে পারবেন না। নতুন আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড গঠিত হবে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত তিনজন প্রতিনিধি এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ঋণ গ্রহিতা শেয়ার হোল্ডার কর্তৃক নির্বাচিত নয়জন ব্যক্তি দ্বারা। তবে বিলের ১৩ দফা বলে, বোর্ডে কোনো শূন্যতা বা বোর্ড গঠনে ত্রুটি থাকার কারণে বোর্ডর কোনো কাজ বা কার্যধারা অবৈধ হবে না।

গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ প্রসঙ্গে বিলে বলা হয়েছে, বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন নিয়ে বাছাই কমিটির সুপারিশকৃত তিনজনের প্যানেল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগ করবে। যিনি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হবেন এবং অনধিক ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকতে পারবেন। এমডি নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান, বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শক্রমে অনূন্য তিনজন এবং অনধিক পাঁচজন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করবে। বাছাই কমিটি এমডি নিয়োগের জন্য তিন প্রার্থীর একটি প্যানেলের সুপারিশ করবে। এক্ষেত্রে পল্লী অর্থনীতি ও অর্থ বা ক্ষুদ্র অর্থায়নের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে, যার বয়স কোনোভাবেই ৬০ বছরের বেশি হবে না। আর এমডি পদ শূন্য হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে বোর্ড কর্তৃক মনোনীত ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমডির দায়িত্ব পালন করবেন।

বিধি মোতাবেক ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। এ মূলধনের ২৫ ভাগ সরকার বা তার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা বা সংগঠন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। বাকি ৭৫ ভাগ ব্যাংকের ঋণ গ্রহিতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে সরকার সময় সময় ব্যাংকের পরিশোধিত শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি করতে পারবে। এছাড়া ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০০ কোটি টাকা। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সামরিক শাসনামলে জারিকৃত সকল অধ্যাদেশ মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হওয়ায় এবং সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাতিলকৃত অধ্যাদেশ হালনাগাদ করে বাংলা ভাষায় নতুন আইন প্রনয়ণে সিদ্ধান্ত অনুসারে দি গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩, রহিত করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন ও পরিমার্জন করে এ বিল প্রনয়ণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ আইনের অধীনে সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রনয়ণ করতে পরবে। এ আইনের কোনো বিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার ওই অসুবিধা দূরীকরণার্থে, লিখিত আদেশ দ্বারা প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

আরও তিনটি বিল পাস: গতকাল রাতে গ্রামীণ ব্যাংক বিল-২০১৩ ছাড়াও আরও তিনটি বিল পাস হয়েছে। এগুলো হলো এশিয়ান রি-ইন্সুরেন্স করপোরেশন বিল-২০১৩, ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিল-২০১৩ এবং পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৩। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এশিয়ান রি-ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন বিল সংসদে উত্থাপন করে পাস করার প্রস্তাব করেন। ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) বিল শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া উত্থাপন করে পাস করার প্রস্তাব করেন। একইভাবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ বিল উত্থাপন করে পাসের প্রস্তাব করেন। তিনটি বিলে বিরোধীদলের সদস্যরা জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনীর প্রস্তাব দিলেও তাদের অনুপস্থিতির কারণে উত্থাপিত হয়নি। পরে কণ্ঠভোটে বিল তিনটি পাস হয়।