রাস্তার জমি ছাড়ার আরজি না মেনে প্রতিবেশীর লাঠির আঘাত : আহত বৃদ্ধের মৃত্যু

 

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার উজিরপুরে পড়শি দু পরিবারের বিরোধ : কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে জমি কিনেও হয়নি রাস্তা

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার জন্য কেনা জমিটুকু ছেড়ে দেয়ার আরজি জানাতে গিয়ে দামুড়হুদার উজিরপুর গ্রামের বৃদ্ধ পচা বিশ্বাস প্রতিবেশীর লাঠির আঘাতে মারা গেছেন। গতকাল সকালে তিনি মারা যান। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে পরশু রাতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে মারা যান তিনি। তার স্ত্রী বৃদ্ধা আনুরা খাতুনও প্রতিবেশীদের লাঠির আঘাতে আহত হন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তার স্বামীর মৃত্যুর খবর অবশ্য গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে জানানো হয়নি। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে আনুরা খাতুনও মার যেতে পারে এ আশঙ্কায় এ মৃত্যুর খবর গোপন রাখা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রতিবেশী প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আয়ুব আলী ও তার তিন ছেলেসহ পরিবারের সদস্যরা গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছেন।

জানা গেছে, গত রোববার বিকেল তিনটার দিকে প্রতিবেশী আয়ুব আলীর সাথে হতদরিদ্র পচার বাড়ি থেকে বেরুনোর পথ নিয়ে দু পরিবারের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আয়ুব ও তার তিন ছেলে দিনমজুর পচার পরিবারের লোকজনের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। গ্রামবাসীরা জানান, উজিরপুর মাঠপাড়ার হতদরিদ্র দিনমজুর পচা বিশ্বাস অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে বাড়ি থেকে বেরুনোর জন্য প্রতিবেশী ফকির মণ্ডলের ছেলে নস্করের নিকট থেকে বেশ কিছুদিন আগে ২০ হাজার টাকায় এক কাঠা জমি কেনেন। কিন্ত ওই জমি আমার বলে দাবি করে আসছিলেন দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিবেশী আয়ুব আলী। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রতিবেশীদের নিয়ে বসাবসিও হয়। গ্রামবাসী জানায়, আয়ুব আলী প্রভাবশালী হওয়ায় সালিস মানি; কিন্ত তালগাছটা আমার এমন ভাব দেখিয়ে ওই পথ নিজের দখলে নেয়ার অপচেষ্টা চালাতে থাকেন। গত রোববার সকালে ওই চিকন পথে গোবরের তৈরি নেদি শুকানোর জন্য আয়ুব আলী ওই পথ ঘিরে দেন। বন্ধ হয়ে যায় হতদরিদ্র পচার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ। এ নিয়ে রোববার বিকেল তিনটার দিকে দু প্রতিবেশীর মধ্যে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। এরই এক পর্যায়ে আয়ুব আলী ও তার তিন ছেলে শরীফ, আরিফ ও মণ্ডল লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় দিনমজুর পচার পরিবারের লোকজনের ওপর। এতে রক্তাক্ত জখম হন দিনমজুর বৃদ্ধ পচা বিশ্বাস, স্ত্রী আনুরা বেগম, মেয়ে শাহানাজ ও পুত্রবধূ ফরিদা খাতুন। আহতদের মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এরমধ্যে বৃদ্ধ পচা বিশ্বাসের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। টাকা-পয়সা জোগাড় করে রাত ১২টার দিকে পচা বিশ্বাসকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয় তার পরিবারের লোকজন। ভোরে রাজশাহী পৌঁছে আহত পচাকে ভর্তি করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পচা বিশ্বাস মারা যান। নিহত পচার লাশের ময়নাতদন্ত রাজশাহী মেডিকের কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন করে গতকালই সন্ধ্যা ৭টার দিকে নিজ বাড়িতে আনা হয় নিহত পচার লাশ। রাত ১০টার দিকে নিজগ্রামের কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহত পচা ছিলেন ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক। হাসপাতালে ভর্তি নিহতের স্ত্রী আনুরা বেগমেরও থাকে না থাকে অবস্থা। তার মুখ দিয়ে রক্ত উঠছে. মাথায় দেয়া লেগেছে ৮টি সেলাই এবং তার ডানচোখে প্রচণ্ড আঘাত হওয়ায় চোখটি নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান তার পরিবারের লোকজন। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিৎকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। এদিকে পচা মারা গেছেন এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আয়ুব ও তার পরিবারের লোকজন গাঢাকা দেয় বলে গ্রামবাসীরা জানান। পরিবারের লোকজন বলেছেন, ১০ হাজার টাকা ধার করে নিয়ে বৃদ্ধ পচাকে রাজশাহী নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখা গেলো না।

দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আহসান হাবীব (পিপিএম) জানান, খবর পাওয়া মাত্রই আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ওই সময় হামলাকারীদের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাতেই নিহত পচার ছেলে কালাম বাদী হয়ে আয়ুব আলী, ছেলে শরীফুল, মণ্ডল ও আরিফ, শরীফুলের স্ত্রী হালিমা ও আয়ুব আলীর স্ত্রী হাচিনার নামে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।