যশোরে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে ধরা পড়লো পুলিশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ঈদকে সামনে রেখে ইয়াবাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উেকাচ আদায় করছেন। গত এক সপ্তাহে একজন কলেজ শিক্ষক ও একজন ব্যবসায়ীর পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে কোতোয়ালি মডেল থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন উপপরিদর্শক মাহবুব ও শামীম আক্তার। এ ছাড়া আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত ১০ জুন শহরের রেল রোডে সুব্রত নামের এক ব্যবসায়ী যুবকের পকেটে মাদক ঢুকিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা খান উপপরিদর্শক মাহবুব। পরে এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাঁকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। গত ১৩ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বারীনগরের নজরুল ইসলাম কলেজের শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব মোটরসাইকেল চালিয়ে মুরাদগড় গ্রামের নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় যশোর-ঝিনাইদ সড়কের রহমতপুর গেটে পুলিশ তাঁকে থামায়। সাদা পোশাকের পুলিশের একজন সোর্স বিপ্লবের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন বিপ্লব বাধা দেন। ওই সোর্সের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। তখন সহকারী উপপরিদর্শক মুনির বিপ্লবকে হাতকড়া পরান। মুনির ও সোর্স দুজন মিলে বিপ্লবকে মারধর করেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন উপপরিদর্শক শামীম আক্তার। তাঁরা বিপ্লবকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হৈবতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বিপ্লবের বড় ভাই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদুল হাসান মিন্টুসহ এলাকাবাসী। মিন্টু বলেন, ‘আমার ভাই কেন, আমাদের বংশে কেউ ইয়াবা বড়ি চেনে না। আমরা দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের এ কথা বলি। একপর্যায়ে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তখন এক রকম ওই সোর্সসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা দ্রুত সটকে পড়েন। আমি বিষয়টি ওসি সাহেবকে জানিয়েছি। দলের নেতারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপপরিদর্শক শামীম আক্তার বলেন, ‘আমি কোনো দোষ করিনি। একটা ঝামেলা হয়েছে, এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কলেজ শিক্ষককে ছেড়ে দিই। এদিকে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপপরিদর্শক শামীমকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। তবে সহকারী উপপরিদর্শক মুনিরের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা জানা জায়নি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদ মুহাম্মদ আবু সরোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শামীমকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ঘটনার সঙ্গে আর কে কে যুক্ত, তা জানা যাবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’কেন বারবার পুলিশ কর্মকর্তারা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন—এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যশোরে দুই হাজার পুলিশ কাজ করে। দুজন পুলিশের দায় সব পুলিশ নেবে না। ব্যক্তির সীমাহীন লোভের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। পুলিশের এই ইয়াবা অস্ত্র বারবার ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হেনস্তা করার ঘটনায় যশোরাঞ্চলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেক অভিভাবক ও তরুণ যুবক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, ‘পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয়ে এখন পকেটবিহীন জামা-প্যান্ট পরে বের হচ্ছি। এদিকে মাদক নির্মূলে যশোর পুলিশের দ্বিতীয় দফায় ১০১ দিনের বিশেষ কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন ইয়াবা বাণিজ্যের কারণে এ কর্মসূচি বিতর্কিত হচ্ছে।