যথাসময়ে পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় অধিকাংশ স্থানে শুরু হয়নি রেজিস্ট্রেশনের কাজ

প্রথম দিনে ৩৫০ জনের নাম রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা থেকে পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় নির্ধারিত দিনের একদিন পর  গতকাল শনিবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিদেশে চাকরির জন্য আগ্রহী পুরুষ ও নারীপ্রার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় জেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।

গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫০ জন রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৭১ জন, দামুড়হুদায় উপজেলায় ৮৪ জন ও জীবননগর উপজেলায় ১৬ জন প্রার্থী রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি পৌরসভার একটিতেও রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়নি। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দিন পাসওয়ার্ড না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, বেলা তিনটার দিকে পাসওয়ার্ড পাওয়ায় রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করেছেন। জীবননগর পৌর মেয়র নোয়াব আলী জানিয়েছেন, তার পৌরসভায় জনবলের অভাবে কাজ শুরু হয়নি। আর দর্শনা পৌর মেয়র মহিদুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে ফোনে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সবাই অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, পাসওয়ার্ড না পাওয়ার কথা। কয়েকজন বিদ্যুত সমস্যার কারণে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

গতকাল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ৪/৫ আগ্রহী যুবক ফরমপূরণ করছেন। এদের একজন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার জিনতলাপাড়ার বাবলু আলী। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় তার ফরমপূরণের কথা থাকলেও আসতে হয়েছে ৪ কিলোমিটার দূরে এ ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে। শুধু বাবলু নন এ সমস্যায় পড়েছেন তার মতো অনেকেই। নিজ এলাকায়  কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে দূরের পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদেরকে। এ কারণে শুরুতেই অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে সরকারের এ উদ্যোগ। তাছাড়া এ কর্মকাণ্ডের কোনো প্রচারণা করেনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, আর তাই গোটা বিষয়টি অজানা রয়ে গেছে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন শঙ্করচন্দ্র ও পদ্মবিলা ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং খোজঁখবর নেন।

প্রতিদিন সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ২৫০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে একজন আবেদনকারী ২৫১টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটি দেশ পছন্দ করে আবেদন করতে পারবেন। নিবন্ধনকৃতদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে বিজয়ীরা পর্যায়ক্রমে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। রেজিস্ট্রেশন করতে আসা কর্মীদের অধিকাংশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, দুবাই, সৌদিআবর ও ওমান।

আবেদনের যোগ্যতা: আবেদনের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে শুধুমাত্র নারী গৃহকর্মী পেশায় বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। প্রার্থী তার পছন্দের পেশায় সর্বাধিক সাতটি দেশে অভিবাসনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রার্থী দু শতাধিক ট্রেড বা পেশা থেকে এক বা একাধিক ট্রেড পছন্দ করতে পারবেন। যাদের বিশেষ কোনো ট্রেড বা পেশায় দক্ষতা নেই, তারা সাধারণ কর্মী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদনকারীকে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে হবে সেগুলো হলো- মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি)। যদি পাসপোর্ট না থাকে তবে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড)। যদি কারো এ দুটি না থাকে সেক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন কার্ড। যাদের এ তিনটি ডকুমেন্টের একটিও থাকবে না তারা আবেদন করতে পারবেন না।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সনদপত্রের (যদি থাকে) এক সেট ফটোকপি, আবেদনকারীর নমিনীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত এমন তিনজন ব্যক্তির নাম ঠিকানা ও মোবাইলফোন নম্বর। দেশে বা বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তার সনদপত্র আনতে হবে।

সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা আল হেলাল জানান, পাসওয়ার্ড রাতে পাওয়ায় গত শুক্রবার কোনো কাজ করা যায়নি। গতকাল শনিবার দুপুরে কিছু লোকজন এসেছেন এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার লোকজনও রয়েছেন। এ কেন্দ্রে কথা হয় কুকিয়া চাদপুরের মজিবর রহমান ও দীননাথপুরের জুয়েল রানার সাথে। তারা উভয়ই জানান, প্রচারণা না থাকায় লোকজনের উপস্থিতি কম। প্রচারণা বাড়ানোর দাবি করেন তারা। সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জিয়াউর রহমান জানান, দাপ্তরিক নানা কাজের কারণে প্রচারণা সম্ভব হয়নি। শিগগিরই মাইকিং করা হবে। গতকাল শনিবার দুপুর পৌনে একটায় পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে ঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে। পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের জানান, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সজীব জোয়ার্দ্দার ছিলো। হয়তো খেতে যেতে পারে। এছাড়া সারাদিন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কিছু সময় পরে উদ্যোক্তা সজীব জোয়ার্দ্দার এসে জানান, তিনি ল্যাপটপের সাহায্যে তিনজনের নাম রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া বিদ্যুত না থাকায় বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  আবুল আমিন জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে সাতটায় পাসওয়ার্ড পেয়েছেন। আর এ কারণে একদিনের বিলম্ব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত পাঁচশজনের রেজিস্ট্রেশন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইউএনও আরও জানান, এ ব্যাপারে মাইকিং করে প্রচারণা করা হবে।

রেজিস্ট্রেশনের কাজ মনিটরিং করার জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মল্লিক সাঈদ মাহবুবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির অন্যরা হলেন- সহকারী কমিশনার আইসিটি কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার, সহকারী প্রোগ্রামার আরিফুল ইসলাম, সালমা খাতুন ও সুবর্ণা রাণী সরকার এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জানান, এ পর্যন্ত জেলায় ৩৫০ জন নারী-পুরুষ বিদেশে যেতে রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ করেছেন।

উল্লেখ্য, সরকারের একসেস্ টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের আওতায় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে সারাদেশে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা তথ্য সেবাকেন্দ্র, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র ও জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিদেশে চাকরির জন্য আগ্রহী ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গাসহ খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় গত শুক্রবার থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানালেন, ভবিষ্যতে বিদেশে চাকরি নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রত্যেককেই এ নিবন্ধনের আওতায় আসতে হবে।