মুজিবনগরে পাট দিয়ে তৈরি মাদুর যাচ্ছে ইতালি ও জার্মানিতে

Meherpur Jute Mate Clip-02

 

শেখ সফি: সংসারের কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে পাট দিয়ে মাদুর তৈরি করে বাড়তি আয় করছে মেহেরপুরের মুজিবনগরের আর্ধশত নারী। এখানে তৈরি মাদুরগুলো চলে যাচ্ছে ইতালি ও জামার্নির বাজারে। দেশের বাজারে এই মাদুরের বাজার সম্প্রসারণ করা গেলে আরও আনেকই এ কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে বলছে সংশ্লিষ্টরা।

মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া ক্যাথলিক মিশনারীর একটি কক্ষে পাট দিয়ে হাতে তৈরি মাদুর বানানোর কাজ করছে নারীরা। এদের কেউ স্বামী পরিত্যাক্ত, বিধবা অথবা কারো সংসারে নেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারের কাজ শেষে অবসর সময়ে বসে না থেকে পাট দিয়ে মাদুর তৈরি করে বাড়তি আয় করছে তারা। বেশি অর্ডার না থাকায় প্রথম দিকে দুই শতাধিক নারী মাদুর তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকলেও এখন কাজ করছে ৫০ জন। নিজ নিজ বাড়িতে বসে প্রথমে বাছাই করা পাট দিয়ে ছোট ছোট থান মাদুর বানানো হয় এরপর মিশনারীর বড় জায়গায় একটির সাথে আরেকটি গেঁথে তৈরি করা হয় বড় মাদুর। প্রতিটি মাদুর বিক্রি হয় ৭ হাজার ৫শ টাকা দরে। এসব মাদুর চলে যায় ইতালি ও জামার্নির বাজারে। মাদুর বানিয়ে স্বচ্ছলতাও ফিরে এসেছে অনেক পরিবারের। এ অঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ না থাকায় বাড়িতে বসেই মাদুর তৈরি করছেন। অর্থ সামজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া ভবরপাড়া গ্রামে বাসবাস কারীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মিশনারীতে পাট দিয়ে ম্যাট তৈরির উদ্যোগ নেয় মিশনারী কর্তৃপক্ষ।

ভবরপাড়া মিশনারির ফাদার ইতালিয়ায় নাগরিক জিওভান্নী আব্বীয়াতি ১৯৭৬ সালে এ এলাকার পিছিয়ে পড়া জনপদের মানুষকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে নারীদের নিয়ে পাট দিয়ে মাদুর তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই ভবরপাড়ার বাসিন্দারা অবসর সময়ে মাদুর বানিয়ে বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।

সন্ধ্যা রানী জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে আমি এই মাদুর বানানোর কাজ করি। সংসারের কাজের ফাঁকে মাদুর বানিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। বানিয়েছি পাকা বাড়ি। শুধু আমি নই এ এলাকার অনেকে মেয়ে মাদুর বানিয়ে আয় করছে।

ভবরপাড়া ক্যাথলিক চার্চের ফাদার ডোমনিক হালদার জানান, অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছলতা আনতে অবসর সময়ে মেয়েরা কাজ করতে পারে আগে অনেক মেয়ে এই কাজ করতো এখন আর আগের মত মাদুরের অর্ডার বেশি পাওয়া যায় না। তবে সরকারি ভাবে যদি এই কাজের প্রেরণা দেয়া হয় এবং স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা যায় তাহলে অনেকেই মাদুর তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

এ ব্যাপারে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, মাদুর তৈরির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছি। মেহেরপুরের মুজিবনগরে তৈরি পাটের মাদুর ইতালি ও জার্মানির বাজারে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা আমার এখানে তৈরি মাদুর বিদেশে রফতানি হলে দেশীয় বাজারে তার চাহিদা থাকবে না কেনো। স্থানীয় বাজারে যদি পাটের তৈরি মাদুরের চাহিদা থাকে তাহলে অবশ্যই বাজারজাত করণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।