মাগুরায় গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও বিডিএস

স্টাফ রিপোর্টার: মাগুরায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিডিএস) নামে একটি  এনজিও প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই প্রায় মাস খানেক ধরে শহরের পুলিশলাইনপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় কার্যক্রম শুরু করে বিডিএস নামের ওই ভুয়া এনজিওটি। তারা দু হাজার ৩শ’ টাকা সঞ্চয় জমা দিলে সহজ শর্তে এক সপ্তাহের মধ্যে ২০ হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখায় গ্রাহকদের। এ হারে সঞ্চয়ের টাকা জমা দিলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেয় তারা। এজন্য তারা স্থানীয় ৫ জনকে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়। ৮ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন দেয়ার কথা বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকেও ৮ হাজার টাকা করে জামানত নেয় বিডিএস।

ওই ৫ কর্মী শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে লোকজনকে টাকা সঞ্চয় করে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণের জন্য প্রলুব্ধ করেন। লোভে পড়ে অনেকেই ওই অফিসে গিয়ে আশিক ও হাবিব নামে কথিত দু কর্মকর্তার সাথে দেখা করে সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন। এভাবে শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার গ্রাহক ২ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা দেন বিডিএস কর্মকর্তাদের কাছে। পরে গ্রাহকরা বিডিএসের কথা মতো ভোটার আইডি কার্ড ও জামানত হিসেবে ব্যাংকের চেকসহ নির্ধারিত ফরম পূরণ করে লোনের আবেদন করেন। গ্রাহকদের ঋণের টাকা দেয়ার নির্ধারিত দিন ছিলো গত রোববার। ওইদিন সকালে গ্রাহকরা টাকা নিতে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবদ্ধ। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রতারিত গ্রাহকরা বিষয়টি জানান।

বিডিএস যে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিলো সে বাড়ির মালিক জুলেখা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলের পর তিনি ওই অফিসের কাউকে দেখেননি। তিনি  জানান, মাস খানেক আগে বিনা জামানতে তিনি আশিক ও হাবিব নামে দু যুবকের কাছে বাসা ভাড়া দেন। তারা নিজেদের বিডিএস কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। এ সময় তারা জানান, তাদের একজনের বাড়ি যশোর ও অপরজনের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর। এর এক মাস পর তারা বাসা ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে গেছেন। এখন প্রতারিত গ্রাহকরা তার বাসায় এসে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

শহরতলীর সিতারামপুর এলাকার দুখু মিয়া জানান, তিনি ব্যবসা করার জন্য ২ লাখ টাকা ঋণ পেতে ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারকরা পালিয়ে যাওয়ায় তিনি এখন বিপাকে পড়েছেন। একই অবস্থা শহরের বাটিকাডাঙ্গার পুতুল রানী, শিখা রানী, শিউলী, দরি মাগুরা এলাকার মাফিয়া বেগম, নতুন বাজারের ব্যবসায়ী সুধাময় দত্ত, তুহিন হোসেনসহ একাধিক গ্রাহকের। প্রায় এক হাজার গ্রাহক প্রায় ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।

বিডিএস’র মাঠকর্মী সাবিনা আক্তার জানান, বিডিএসের কর্মকর্তা পরিচয়ে আশিক ও হাবিব ৮ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বলে তাকে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। এজন্য তার কাছ থেকে তারা ৮ হাজার টাকা জামানত নেন। একইভাবে আরো ৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু তাদের বেতন না দিয়ে জামানতের টাকা নিয়ে প্রতারকরা পালিয়ে গেছেন। এখন তিনিসহ ৫ মাঠকর্মী গ্রাহকদের তোপের মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মাগুরা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাগুরা সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিডিএস নামে কোনো এনজিওর রেজিস্ট্রেশন নেই। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কেও আমরা অবগত নই। তবে কেউ এনজিওর নামে প্রতারণা করলে অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।