ভূমিহীন পরিবারে জন্ম গ্রহণকারী মেধাবী তারিক কলেজ ভর্তি হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে

!

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি: দরিদ্র ভূমিহীন পরিবারে জন্ম গ্রহণকারী মেধাবী তারিকুজ্জামান তারিক অর্থের অভাবে কলেজ ভর্তি হওয়ার অধিকার হেতে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য চয়েজ দিলেও আদৌ সে কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি-না এ নিয়ে চরম সঙ্কটে সময় পার করছে। হরিণাকুন্ডুর শিশুকলি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ হতে সে এবছর জিপিএ ৪.৯১ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ভূমিহীন শ্রমিক ছব্দুল হোসেনের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সোহেল শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় ছোট ছেলে তারিককে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। তরিককে লেখাপড়া শিখিযে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে, দুঃখের দিনের অবসান ঘটিয়ে সুখের হাতছানি তাকে প্রতি নিয়ত তাড়িত করত। কিন্তু জটিল কীডনি রোগে আক্রান্ত অসুস্থ্য পিতার স্বপ্ন পূরণে অন্তরায় কটি কাগজের নোট। শ্রীপুর গ্রামের পূর্ব প্রান্ত ঘেষে প্রবাহিত জিকে প্রধান সেচ খালের পাড়ে ওয়াপদার ৩/৪ শতক জমিতে নামমাত্র একটি ঘর তুলে সেখানে দুটি সন্তানসহ স্বামী স্ত্রীর মানবেতর ভাবে বসবাস। স্থায়ী সম্পদ বলতে পৃথিবতে এই অসহায় পরিবারটি কোথাও কিছু নেই। পিতা অন্যের ক্ষেতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে কোন রকমে জীবিকা নির্বহ করেন। শ্রমিকের কাজ যখন বন্ধ থাকে তখন কোন কোন দিন তাদের পরিবাকে অনাহারে অর্ধাহারে কাটে বলে জানায়। ২২ বছর বয়সী বড় ছেলে সোহেল জন্মগত ভাবে পতিবন্ধী হওযায় সেও পিতার মাতার গলগ্রহ হয়ে জীবন নির্বাহ করছে। একমাত্র মেধাবী ছোট ছেলে তারিকই পিতা মাতাসহ প্রতিবন্ধী ভায়ের শেষ ভরসা স্থল। কিন্তু সেই শেষ ভরসা স্থলটিও এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম।

মেধাবী তারিক পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তিপ্রাপ্ত এবং জেএসসিতেও ভাল ফলাফলের অধিকারী হলেও পিতার অসুস্থ্যতা জনিত কারনে পদার্থ বিজ্ঞানে ১ নম্বর কম পাওয়ায় সে এসএসসিতে জিপিএ ৫ অর্জন হতে বঞ্চিত হয়েছে। পরীক্ষার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিতাকে নিয়মিত সেবা শুশ্রুষা করতে যেয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে মাত্র ১ নম্বর কমের কারনে জিপিএ ৫ না পাওয়া তার জীবনের একটি কষ্টকর অধ্যায়। তবে পিতাকে সেবা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত অনুভব করে বলে সে জানায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ এলাকার দু-একজন দানশীল ব্যক্তির যত সামান্য সহযোগিতা এবং মাঝে মধ্যে অন্যের ক্ষেতে-পান বরজে শ্রমিকের কাজ করে সঞ্চয়কৃত অর্থ, সেই সাথে মায়ের কাঁথা সেলাই ও মুরগীর ডিম বিক্রি হতে যক্ষের ধনের মত করে জমানোর সামান্য টাকার উপর নির্ভর করে এপর্যন্ত কষ্ট করে লেখাপড়া চালিযে এসেছে । কিন্তু ইজ্ঞিনিয়ারিং পড়তে আগ্রহী তারিক জেলা সদরের সরকারি কেসি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার আকাক্সক্ষা এখন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। তারিকের  অসহায় পিতা মাতার আকুতি জেলা প্রশাসনসহ সমাজের দানশীল ব্যক্তি/সংস্থা তাদের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়া অব্যাহত রাখার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।