ভারতে পালানোর সময় আদম ব্যাপারী করিম দর্শনা চেকপোস্টে আটক

বিদেশে পাঠনোর নামে ১৫/২০ জনকে পথে বসিয়ে অর্ধকোটি টাকা হজম

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: বিদেশে পাঠানোর নাম করে ১৫/২০ জনের নিকট থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভারতে ফেরার সময় কুষ্টিয়া জেলা সদরের দহগোল্লা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে হাজি রেজাউল করিম (৫৫) নামের এক আদম ব্যাপারী দর্শনা চেকপোস্ট থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে দর্শনা গেদে বর্ডার হয়ে ভারতে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন বিভাগের সদস্যরা তাকে আটক করেন। আটক হাজি রেজাউল করিম বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অবৈধ পন্থায় ভারতীয় নাগরিক হয়েছে। তার নিজ নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্টও তার নিকট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আদমব্যাপারীর খপ্পরে পড়া কুষ্টিয়া ইবি থানার উজানগ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মোজাম্মেলের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে আটক করা হয়। আটক ওই আদমব্যাপারীর নামে কুষ্টিয়া আদালতে মামলা আছে এবং সে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি বলেও  সংশিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে।

কুষ্টিয়া ইবি থানার উজান গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন জানান,  আমিসহ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বেশ কয়েকজন বেকার যুবক চাকরির উদ্দেশে জরুরিভাবে সৌদি যাওয়ার জন্য বছর দেড়েক আগে এলাকারই আদমব্যাপারী রেজাউল করিমের নিকট জনপ্রতি ৩ লাখ টাকা করে জমা দেই। আদমব্যাপারী রেজাউল তাদেরকে প্রথমে তিন মাসের মধ্যে ভিসা পার্সপোর্টসহ সমস্ত কাগজপত্র রেডি করে পাঠিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে নানা অজুহাত দেখিয়ে শুরু করে টালবাহানা। এক পর্যায়ে আদমব্যাপারী জানায় বাংলাদেশিদের আর সৌদি ভিসা দিচ্ছেনা। এখন তোমাদের যেতে হলে ভারত হয়ে যেতে হবে। যেহেতু আগের দেয়া টাকার বেশিরভাগটাই ঢাকা অফিসে খরচ হয়ে গেছে এখন বাড়তি আরো একলাখ করে টাকা লাগবে। অতি কষ্টে ওই টাকাও জোগাড় করে তুলে দেয় প্রতারক ওই আদমব্যাপারীর হাতে। এর কিছু দিনের মাথায় মোজাম্মেলকে ভারতে নিয়ে যায় এবং ভারত হয়ে সৌদি পাঠানোর সময় ভারতীয় এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন বিভাগের সদস্যরা নকল পাসপোর্ট ও ভিসায় অবৈধভাবে সৌদি যাওয়ার চেষ্টার অপরাধে মোজাম্মেলকে আটক করে। ৩ মাস সাজাভোগের পর বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে দেশে ফেরত আসি। দেখা করি ওই আদমব্যাপারীর সাথে। টাকা ফেরত চাইলে দিতে পারবে না বলে জানালে স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক বসিয়েও কাজ না হওয়ায় প্রতারক আদমব্যাপারী ও তার সহযোগী একই এলাকার আনছারের ছেলে সুলতানের নামে কুষ্টিয়া আদালতে দায়ের করি মামলা। ওই মামলয় সে হাজিরা না দিলে তার নামে জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। মামলার অপর আসামি সুলতান বর্তমানে জেলহাজতে থাকলেও চতুর রেজাউল করিম পাড়ি জমায় ভারতে। অনেক চেষ্টা করেও আর দেখা মেলেনা তার। গত ১৭ নভেম্বর লোক মারফত জানতে পারি রেজাউল দেশে এসেছে এবং তার জামাইয়ের বাসায় কুষ্টিয়া পিয়ারীতলায় অবস্থান করছে। পুলিশসহ লোকজন নিয়ে হানা দেয়া হয় ওই বাসায়। আমরা ওই বাসায় পৌছানোর আগেই চতুর রেজাউল সটকে পড়ে। জাল বিস্তার করা হয় দর্শনা ও বেনাপোল বর্ডারে। অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দর্শনা চেকপোস্ট হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন বিভাগের সদস্যরা তাকে আটক করে। সে বর্তমানে দামুড়হুদা থানাহাজতে আটক আছে। আদমব্যাপারী প্রতারক রেজাউল পুলিশের হাতে আটক হয়েছে এ খবর জানাজানি হলে গতকালই  কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ এলাকার ৮ পাওনাদার ছুটে আসেন দামুড়হুদা থানায়।