বছর ঘুরে আবার দুয়ারে ঈদুল আজহার পূর্বরাত : যুবদল নেতা বল্টু হত্যার বছর পার

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল হাই বল্টু হত্যা মামলার এক বছর অতিবাহিত হলেও এক আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়নি। হাইকোর্ট থেকে আসামিরা জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বছর ঘুরে আবারও দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহার পূর্বরাত। এক বছর আগে এ রাতে নৃশংসভাবে খুন করা হয় পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল হাই বল্টুকে। নতুন করে বল্টুর রেডিয়ামের মতো জ্বলজ্বলে স্মৃতি আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, রাজনৈতিক সহকর্মী এমনকি আপামর আলমডাঙ্গাবাসীকে বেদনাবিধূর করে তুলেছে। তার একমাত্র ছোট্ট শিশুকন্যার অনন্ত পথ চাওয়া করুণ আকুতি বেদনার সাগরে হাবুডুবু খাবে। পরিবারের সদস্যদের হৃদয় নতুন করে বেদনায় মোচড় দিয়ে উঠবে। প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করবে।

আলমডাঙ্গার মিয়াপাড়া সংলগ্ন ক্যানেলপাড়ার আব্দুল বারির বড় ছেলে আব্দুল হাই বল্টু পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। বল্টু ছিলেন অত্যন্ত সদালাপি ও হাস্যোজ্জ্বল যুবক। আব্দুল হাই বল্টু গত ২৭ অক্টোবর অর্থাৎ গত বছর ঈদুল আজহার আগের দিন শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। বের হওয়ার আগে ৫ বছরের একমাত্র মেয়ে বর্ষা মেহেদী কিনে নিয়ে যাওয়ার আবদার করে। ওই দিন ঈদের বাজার করারও পর্যাপ্ত টাকা ছিলো না বল্টুর কাছে। ছোটখাট ব্যবসায়ী বল্টু সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় টাকা যোগাড় করেন। এরপর তিনি ঈদের জন্য সামান্য কেনাকাটা ও মেয়ের জন্য মেহেদী কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজি মোড়ে পৌঁছুতেই ক্ষমতাসীন পার্টির মদদপুষ্ট দুর্বৃত্তরা বল্টুকে তাড়া করে। জীবন বাঁচাতে সে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে একটি বন্ধ গলিপথে ঢুকে পড়ে। সামনে বেরুনোর আর রাস্তা না থাকায় বল্টুকে রামদা, চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। ওই নির্মম দৃশ্য অনেকেই দেখেছে তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে যায়নি বাধা দিতে। সন্ত্রাসীরা মহড়া দিতে দিতে চলে গেলে প্রতিবেশীরা বল্টুকে রক্তাক্ত অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইউনাইটেড ও পরে একতা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ওই রাতে কোনো মাইক্রোবাস যোগাড় করতে না পেরে হায়দার আলীর (টিটি) মালবাহী ছোট পিকআপভ্যানে বল্টুকে নেয়া হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট খালি না থাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় ফকিরাপুলের ব্রাইটন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ক্লিনিকেই পরদিন শনিবার অর্থাৎ ঈদের দিন বেলা ৩টার দিকে বল্টু মারা যান। বল্টুর পিতা ওই ঘটনায় বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মালেক। মামলার প্রায় ৭ মাসেও এক আসামিকে গ্রেফতার না করায় বল্টুর পরিবারের সাথে সাথে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝেও হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছিলো। ওই সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল কাউনাইন টিলুর সাথে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। তারা তদন্তের খোঁজখবর নেন ও আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) তাদের বলেছিলেন, ‘সরি, আমি ব্যর্থ।’ তার কিছুদিন পর বল্টু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের ওই মামলা প্রসঙ্গে কথা উঠলে আব্দুল মালেক বলেন, ‘ওটা তো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড দেশে কতোই ঘটে। এনিয়ে এতো কথা কিসের?

ইতোমধ্যে এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক বছর অতিক্রম হতে চলেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাও বদল হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত এক আসামিকে গ্রেফতার  করা হয়নি। সচেতনদের ধারণা, এ আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে, আসামিদের গ্রেফতার করা না হলে এ ঘটনার জের আলমডাঙ্গার রাজনীতির জন্য বুমেরাং হতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে সহিংস রাজনীতির কালো অধ্যায়।