ফলোআপ: দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লা গ্রামে বিবাদমান জমিতে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব

বৃদ্ধ সার্থক হত্যা :৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা  

 

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে হারুন রাজু/মোস্তাফিজুর রহমান কচি: দামুড়হুদার পীরপুরকুল্লা গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ হামলায় চালায় বৃদ্ধ সার্থক মণ্ডলের ওপর। তর্কবিতর্কের মাঝে শহিদুলের থাপ্পড়ে মারা যান সার্থক মণ্ডল। স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, বৃদ্ধের ওপর পরিকল্পিতভাবেই হামলা চলানো হয়। দু দিনেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও দামুড়হুদা থানার ওসি। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের পীরপুরকুল্লা মহাখোলাপাড়ার ফকির মণ্ডলের ছেলে সার্থক মণ্ডলের সাথে মুন্সিপুর মাঠের ১৭ কাঠা জমি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় একই গ্রামের রজব আলীর ছেলে নজরুল ইসলামের। বছর খানেক আগে জমির অংশীদার সার্থকের বোন সাড়ে ৮ কাঠা জমি বিক্রি করেন নজরুল ইসলামের কাছে। তা মানতে নারাজ সার্থক। বোনের জমি সার্থক মণ্ডলের নিজের কেনার ইচ্ছা থাকলেও তা পূরণ না হওয়ায় সৃষ্টি হয় দ্বন্দ্বের।

এদিকে সাড়ে ৮ কাঠা জমি কেনাকে কেন্দ্র করে স্বার্থক ও নজরুলের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। এরই মধ্যে ওই সাড়ে ৮ কাঠা জমি নজরুল বন্দক দেয় একই গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে শহিদুল ইসলামের কাছে। ওই জমিতে ধানচাষ করেন শহিদুল। শহিদুলকে না জানিয়ে গত শুক্রবার ধান কেটে নিয়ে যায় সার্থক ও তার লোকজন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গ্রামের মানিক মোড়ে ধান কাটাকে কেন্দ্র করে শহিদুল ও নজরুলের সাথে কথাকাটাকাটি হয় সার্থকের। এক পর্যায়ে শহিদুল ক্ষিপ্ত হয়ে সজোরে সার্থকের গালে ধাপ্পড় দেয়। থাপ্পড়ে বৃদ্ধ সার্থক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান। তার মৃত্যুর খবরে শহিদুল ও নজরুল দেয় গাঢাকা। ঘটনার পরপরই সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ আহসান হাবীব ও কার্পাসডাঙ্গা আইসি ইনচার্জ এসআই ওয়ালিয়ার রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ সকাল ১০টার দিকে বৃদ্ধ সার্থকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন। এ সময় গ্রামবাসীর উদ্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুনরায় কেউ যদি আইন হাতে তুলে নেয়, সৃষ্টি করে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার, তার বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হবে কঠোর আইনিব্যবস্থা। সার্থক মণ্ডলকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের জন্য এরই মধ্যে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যার পর সার্থক মণ্ডলের লাশ নেয়া হয় নিজ বাড়িতে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। রাত ৯টার দিকে স্থানীয় গোরস্থানে সার্থক মণ্ডলের লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বড় ছেলে বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় দায়ের করেছেন হত্যা মামলা।

এদিকে গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করেন মানবতা সংস্থার নেতৃবৃন্দ। নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকারের নেতৃত্বে সংস্থার নেতৃবৃন্দ সরেজমিন পরিদর্শন শেষে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, পীরপুরকুল্লার নজরুলসহ ৬ জনের কিলঘুষি লাথিতে প্রাণ হারিয়েছেন বৃদ্ধ সার্থক। এ মর্মে হত্যামামলাও রুজু করা হয়েছে।