ফলোআপ : চুয়াডাঙ্গায় সাড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ : ৬৮ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগ : পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় মুখ ধুবড়ে পড়বে লক্ষ্য অর্জন

 

বেগমপুর প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গায় চলতি মরসুমে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে সাড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬৮ হেক্টর জমিতে ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জেলা  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানালেও এর পরিমান অনেক বেশি হবে বলে চাষি মহল মনে করছেন। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় হঠাত করে শীষ ধানে ব্লাস্ট রোগ লাগায় দিশে হারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকূল। বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো ফল হচ্ছে না বলে অনেক চাষি জানিয়েছেন। আবার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু কিটনাশক ওষুধ কোম্পানি ওত পেতে রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।

চলতি বছর হঠাৎ করে গমে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। সতেজ সবল গমের গাছ হলেও শীষ শুকিয়ে যায়। ফলে কাছা গম কেটে কেটে চাষিরা গরু ছাগল দিয়ে কাওয়ায়। গম চাষ করে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের জন্য বছরের খাবার মজুদ করার জন্য বোরো ধান চাষে ঝুঁকে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা জেলা  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর জেলাতে বোরধান চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ৩৩ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমি। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিলো হেক্টর প্রতি ৩.৮ মেট্রিক টন। সে হিসাবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯০৩ মেট্রিক টন। কিন্তু চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমি। লক্ষ্য মাত্রার চাইতে ১৫৩ হেক্টর জমিতে বরো আবাদ বেশি হয়েছে। গত বছর জেলাতে ধান চাষ হয়েছিলো ২৬ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের চাষ বেশি হয়েছে ৭ হাজার ৮৩ হেক্টর জমি। গমের আবাদ মার খাওয়ায় বোরোধানের চাষ লক্ষমাত্রার চাইতে অনেক বেশি হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১২ হাজার ৪২৫ হেক্টর, দামুড়–হুদা উপজেলায় ৮ হাজার ৫৩৩ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৭ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষ হয়েছে। হঠাৎ করে আবহাওয়া জনিত কারণে নেক ব্লাস্ট রোগ ৬৮ হেক্টর জমিদে আক্রান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হেক্টর, জীবননগর উপজেলায় ৪ হেক্টর বোর ধানের জমিতে ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে। ব্লাস্ট আক্রান্ত জমির পরিমান ৬৮ হেক্টর জমি নিরূপন করা হলেও এর পরিমান অনেক বেশি হবে বলে চাষি মহল মনে করছেন। ফলে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে হিসাবনিকাশকারীদের।

চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পূর্বপ্রস্তুতি না থাকা, প্রচার প্রচারণা না থাকা। দায়িত্বরত মাঠপর্যায়ের কৃষি অফিসারদের চাষিদের সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকা। গমের আবাদে ব্লাস্ট লাগার পর বোরো ধানের আবাদে ব্লাস্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিকূলে। ধারকর্য করে গম চাষ করে তা ঘরে না ওঠায় নতুন করে ধারকর্য করে আবারও ধান চাষ করে একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষিদের মাথায় উঠেছে হাত। একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বারধানে ব্লাস্ট রোগ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেছে বলে জানা গেছে। নতুন করে যেন ধানের জমি আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি অধিদপ্তর নানামুখি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।