নূর হোসেনের বান্ধবী আটকের পর মুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের এক নম্বর আসামি নূর হোসেনের বান্ধবী ওয়ার্ডকাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌসী নীলাকে গতকাল রোববার গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেদু ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে।এসময় তার কাছে নূর হোসেনসম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চায় গোয়েন্দা পুলিশ। সেভেন মার্ডারের সাথে নূরহোসেনের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি।

কাউন্সিলরনীলা অপরাধ জগতের ডন নূর হোসেনের প্রায় সকল অপকর্ম কাছ থেকে দেখেছেন। তাইনীলার কাছে নূর হোসেনের অপরাধ জগতের না জানা অনেক ঘটনার বিষয় জানতে চায়পুলিশ।

সেভেন মার্ডারের পরদিন ২৮ এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টায় নূরহোসেন নীলাকে ফোন করে বলে, তুই আমাকে না বলে ভারতে গিয়েছিস। আমি ভারতেআসছি। তোকে এবার শেষ করবো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগে থেকেই নীলা তার বাবাআব্দুল মোতালেবের চিকিত্সার জন্য ভারতে ছিলেন বলে জানান। নূর হোসেন ফোনেহুমকি দেয়ায় ভারতে নীলা তার অবস্থান পরিবর্তন করেন।

গতকাল রোববারনজরুলসহ সেভেন মার্ডারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে গণশুনানিতে নীলাঅংশ নেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লারনেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি এ গণশুনানি পরিচালনা করছে। কাউন্সিলরনীলা গণশুনানিতে অংশ নিয়ে তার মাইক্রোবাসযোগে সিদ্ধিরগঞ্জের বাসায়ফিরছিলেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকার ফায়ার স্টেশনের সামনে ডিবিপুলিশ কর্মকর্তারা সন্ধ্যায় নীলাকে আটক করে। পরে জেলা ডিবির কার্যালয়ে নিয়েনীলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাত পৌনে ৯টায় ছেড়ে দেয়।

২০১১ সালেনারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নীলা সিদ্ধিরগঞ্জ ৪, ৫ ও ৬ নম্বরওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হন। নীলা সিদ্ধিরগঞ্জমহিলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার পর নীলাসিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতাদের সাথে নির্বাচনে সহযোগিতারবিষয়ে দেখা করেন। সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাউন্সিলর নূরহোসেনের সাথে তার কাঁচপুর সিমরাইলের বাসায়ও দেখা করেন। ওই সময় নূর হোসেনসুন্দরী নীলাকে টার্গেট করেন বলে তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানান। নির্বাচনেনীলাকে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন নূর হোসেন। নীলা তখন বুঝতেপারেনি নূর হোসেন তাকে পাওয়ার জন্য এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। নির্বাচনেনীলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন নূরহোসেনের আসল চরিত্র নীলার সামনে ফুটে ওঠে। নীলার স্বামী আবু সায়েমসোবহানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নীলার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুলমোতালেবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় নূর হোসেন। নিজের জীবন ওএকমাত্র কন্যার জীবন, পিতা-মাতা এবং স্বামীর জীবন রক্ষার্থে নীলা নূরহোসেনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। নূর হোসেনের সাথে দৈহিক মেলামেশা থেকেশুরু করে তার সবকিছুই নীলা নীরবে সহ্য করেন।

জানা যায়, যাত্রাবাড়ী এলাকারএকটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে নীলা ও নূর হোসেন থাকতেন। নূর হোসেন মাদক, অস্ত্র ব্যবসা, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখল ও সন্ত্রাসসহ অপরাধ জগতেরসকল অপকর্ম বিনা বাধায় সম্পন্ন করে কোটি কোটি টাকা কামায়। পুলিশ, র‌্যাব, দলীয় নেতা, সাংবাদিকসহ প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা প্রতিদিন নূরহোসেনের বাসা কিংবা সিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডের অফিসে এসে টাকার প্যাকেটনিয়ে যেতো। নীলা বলেন, তিনি এদের অনেককে চিনেন। জানান, প্রশাসনের সহযোগিতায়কীভাবে একজন ট্রাক হেলপার থেকে অপরাধ জগতের ডন হন নূর হোসেন। এগুলো কাছথেকে নীলা নীরবে দেখেছেন। তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে এমন কোনো নেতা নেইযার পকেটে নূর হোসেনের টাকা যায়নি।