নির্বাচনে যেতে সরকারকে চার শর্ত বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে সরকারকে চারটি শর্ত দিয়েছে বিএনপি। শর্তগুলো হলো- নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন বেগম খালেদা জিয়া, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে নির্বাচন। গতকাল রোববার দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব শর্তের কথা তুলে ধরেন।

রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। দেশের জনগণ, তরুণ সমাজ, প্রতিটি শ্রেণি-পেশার ভোটাররা আর একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে দিয়ে দেশে এক ব্যক্তির শাসন চালাতে দেবে না। নির্ভয়ে জনগণ যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সে রকম নির্বাচনই দেশে অনুষ্ঠিত হতে হবে। তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে অঙ্গিকারবদ্ধ।

রিজভী বলেন, পিঠা ভাগের মতো সংসদীয় আসনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নিজেদের কব্জায় রেখে বাকি স্বল্পসংখ্যক আসন অন্যদলকে ভাগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরের কথায় যে ‘আনুষ্ঠানিকতা’র কথা বলা হয়েছে সেটা কী তারই আলামত? আসন ভাগাভাগির বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। যতই ষড়যন্ত্র করেন না কেন, যতই ভাগাভাগি করেন না কেন, বানরের পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচন এদেশের জনগণ হতে দিবে না। ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন আর এদেশে করতে দেয়া হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো শঙ্কা নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উন্নয়ন দিয়েই দেশবাসীর মন জয় করেছে দল। তাই আগামী নির্বাচন কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে তার অধীনে অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ধোঁকা দেয়ার বিদ্যা ভালো করেই জানে। আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে তাদের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত। কিভাবে আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন মঞ্চস্থ করা যায় সেই চক্রান্তমূলক আয়োজনে তারা ব্যস্ত রয়েছেন। সাজানো জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে মিথ্যা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেয়া সেই মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ।

রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচনকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা প্রতিহত করতে আবারও লুটেরা সরকার কায়েমের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে ওঠেছে। যেভাবে দেশের আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, শেয়ার বাজার লুট করা হয়েছে, শিক্ষা ব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, সারাদেশে লুটপাটের যে আনন্দমেলা চলছে, সড়কের বেহাল দশায় প্রতিদিন যেভাবে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে তাতে উন্নয়নের খোলস ছিঁড়ে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। নির্যাতন নিপীড়নের মাধ্যমে, গুম, খুন, ক্রসফায়ারে নির্বিচারে মানুষ হত্যার মাধ্যমে দেশে যে আতঙ্কিত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যেভাবে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বারা নারীশিশু নির্যাতনসহ মানুষের ঘরবাড়ি, ভিটা বেদখল চলছে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন ফুঁসে উঠেছে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গত শনিবার খুলনা জেলা বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মোড়লকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মটরসাইকেল ও মাথার টুপি পাওয়া গেলেও তাকে এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমরা মনে করি- কে বা কারা তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমি আহ্বান জানাবো অবিলম্বে তাকে খুঁজে বের করে জনসমক্ষে হাজির করার জন্য। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ।