ধর্মঘটের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই : ছাত্রলীগ

মোমিন গ্রেফতারের প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার স্কুল-কলেজে ছাত্রলীগের ছাত্রধর্মঘট পালিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রলীগ আহূত চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ধর্মঘট পালিত হয়েছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলেও পিকেটারেরা তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি। এদিকে জেলা ছাত্রলীগ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এ ধর্মঘটের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া শান্তিপাড়ার সুমনের রগকাটা মামলার আসামি গ্রেফতারকৃত মোমিন জেলা ছাত্রলীগের কেউ নয়।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকাধীন শান্তিপাড়ার রুহুল আমীনের ছেলে সুমনকে গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা কোর্টমোড়ের ঘাসফুল কম্পিউটারের দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা) এলাকায়। সেখানে একদল যুবক তার ওপর নৃশংসতা চালায়। তার পায়ের রগ কেটে দেয় ওই যুবকেরা। তার কিডনিতেও ছুরিকাঘাত করা হয়। মোবাইলের মাধ্যমে খবর পেয়ে সুমনের পিতা রুহুল আমীন এসে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই রাতেই তাকে ঢাকায় রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনার পরদিন সুমনের পিতা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারপাড়ার মুক্তার বিশ্বাসের ছেলে এ মামলার অন্যতম আসামি আব্দুল মোমিনকে গত সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা শিশুস্বর্গ পার্ক এলাকা থেকে সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর বিকেলে ছাত্রলীগের ব্যানারে চুয়াডাঙ্গা শহরে মাইকিং করা হয়। মাইকিং করে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের ছাত্রধর্মঘট পালিত হবে। গতকাল ধর্মঘটের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও পিকেটারেরা স্কুল বা কলেজের গেট থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও তাদের ক্লাস নেয়া হয়নি।

স্কুল চলাকালীন চুয়াডাঙ্গা ভি.জে উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ছাত্র উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম। যারা বিদ্যালয়ে গিয়েছে তারা খেলাধুলায় ব্যস্ত। শিক্ষকদের উপস্থিতি থাকলেও তারা কোনো ক্লাসে যাননি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শরীফ উদ্দিন জানান, আমাদের সব শিক্ষকই উপস্থিত আছেন। কিন্তু ছাত্ররা না আসায় ক্লান নেয়া সম্ভব হয়নি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মাহফুজুল হোসেন উজ্জ্বল বলেন, স্কুলের গেট থেকে পিকেটারের ছাত্রীদেরকে স্কুলে ঢুকতে দেয়নি বলে শুনেছি। তবে এরপর এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। শিক্ষকরা যথারীতি বিদ্যালয়ে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রীরা এলে অবশ্যই ক্লাস হতো। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানায়, কলেজে ঢোকার সময় গেট থেকে কয়েকজন ছেলে তাদেরকে হুমকি দিয়ে কলেজে ঢুকতে দেয়নি।

গতকাল ধর্মঘট আহ্বানকারীদের পক্ষ থেকে কারো কোনো বিবৃতি বা প্রেসবিজ্ঞপ্তি মাথাভাঙ্গা দপ্তরে আসেনি। তবে চুয়াডাঙ্গা ছাত্রলীগ বলেছে শহরে আব্দুল মোমিন নামে একজনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কে-বা কারা জেলা ছাত্রলীগের নামে মাইকিং করে পৌর এলাকার স্কুল-কলেজে ধর্মঘটের আহ্বান করেছে তা আমাদের জানা নেই। গতকাল মঙ্গলবার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. শরীফ হোসেন দুদু স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় ‘মোমিনকে জেলা ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার জানামতে জেলা কমিটি, সদর থানা কমিটি, কলেজ কমিটি, পৌর কমিটির কোনো উল্লেখযোগ্য পদে নেই সে। এমনকি এসব কমিটির সে কোনো সদস্যও নয়। তারপরেও কে বা কারা এ সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তার সাথে জেলা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। চুয়াডাঙ্গায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এর জন্য জেলা ছাত্রলীগ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কোনো অনৈতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তার দায়ভার জেলা ছাত্রলীগ বহন করবে না। এরূপ কর্মকাণ্ড যে করবে, সে তার নিজ দায়িত্বে সকল দায়ভার বহন করবে। জেলা ছাত্রলীগ কারো ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজ করে না।’

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *