দারিদ্র্যের কাছে হার মানেনি জীবননগরের অদম্য মেধাবী ছাত্রী শারমিনা খাতুন

 

জীবননগর ব্যুরো: দারিদ্র্যতা দমাতে পারেনি জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের শারমিনা খাতুনের সাফল্যকে। সে জীবননগর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কারিগরি বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে এর আগে ২০১৪ সালে জীবননগর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে। জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের ভূমিহীন দিনমজুর নজরুল ইসলামের মেয়ে শারমিনা খাতুন। শারমিনা জন্মের পর থেকেই সংসারে শুধু অভাব-অনটনই দেখেছে। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে তার বেড়ে ওঠা। খেয়ে না খেয়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। কলেজে যাওয়ার জন্য তার একটিই মাত্র পোশাক ছিলো। তার কোনো গৃহশিক্ষক ছিলো না। বই না থাকায় শারমিনা সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে লেখাপড়া করেছে। পরীক্ষার আগে বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফটোকপি করে লেখাপড়া চালাতে হয়েছে তার। খাতা-কলমের জন্যও অন্যের সহায়তা নিতে হয়েছে। এনকি লেখাপড়ার খরচ চালাতে তাকে টিউশনিও করতে হয়েছে। ভয় ছিলো পিতা-মাতার আর্থিক অসামর্থের কারণে বন্ধ হয়ে যাবে তার লেখাপড়া। কিন্তু শিক্ষকদের উৎসাহ এবং জীবননগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বই-পত্র কিনে দেয়াসহ অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে সে। এছাড়া মা মধুমালা খাতুন বাড়িতে হাঁস, মুরগি, ছাগল পালন এবং কাঁথা সেলাই করে যা আয় করতেন তা দিয়েই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগানোর চেষ্টা করেছেন। এরকম বৈরি পরিবেশও শারমিনার লেখাপড়া থেকে দমাতে পারেনি। অন্তহীন সমস্যা নিয়ে অভাবের সাথে লড়াই করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছে সে। শারমিনা ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে আগ্রহী। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতা তার স্বপ্ন পূরণে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থের অভাবে তার উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

শারমিনার কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দীন জানান, তার মেধা দেখে কলেজ থেকে যথাসাধ্য সহায়তা করা হয়েছে। পরীক্ষায় ফরম পূরণের টাকাও নেয়া হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে মেয়েটির লেখাপড়ার কী হবে তা ভেবে তারা শংকিত। তিনি গরিব ও মেধাবী ছাত্রী শারমিনার পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।